নাম তার সবুজ হাঁড়িচাচা। দেখতে খুবই সুন্দর। পুরো শরীর সবুজে ঘেরা। ঠোঁটগুলো লাল টকটকে। অনেকটা লাল-সবুজের পতাকার মতোই দেখতে। পাখায় একটু লেমন রঙের আবরণ, পাশে কালো রঙের কাজ রয়েছে। অপরূপ সৌন্দর্যের পাখি এই সবুজ হাঁড়িচাচা। এই পাখির বড় বৈশিষ্ট্য হলো, প্রায় সব পাখির ডাক সে নকল করতে পারে। নিজেও ডাকতে পারে আরও সুন্দর করে। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার এই সুদর্শন পাখিটি বাংলাদেশে সংরক্ষিত পাখির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তার মানে পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে। বহু বছর আগে এই অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী পাখিটিকে বাংলাদেশের অনেক বনেই দেখা যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যাচ্ছে। সুদর্শন পাখিটির আরেক নাম পাতি সবুজতাউরা। বৈজ্ঞানিক নাম সিস্সা চায়নিজ অর্থাৎ চীনের দোয়েল। ইংরেজিতে কমন গ্রিন ম্যাগাপি (Common Green Magpie)। রক্তলাল চোখ ও প্রবাল লাল পা। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার বর্ণ তামাটে-মেরুন। পিঠের বর্ণ পাতা-সবুজ। দেহতল হালকা সবুজ।
পরিমিত আকারের একটি সবুজ ঝুঁটি মাথার পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত। ঠোঁট থেকে চোখ হয়ে একটি কালো ডোরা মাথার পেছন পর্যন্ত চলে গেছে। ডোরাটি মাথার ঝুঁটিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। ডানার প্রান্ত ও মধ্য পালক স্পষ্ট তামাটে। লেজ লম্বা ও সবুজ। ডানার গোড়ার পালক ও লেজের পালকের আগা সাদাটে।
সবুজ হাঁড়িচাচা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে এ প্রজাতির মূল আবাসস্থল। এ পাখি বিচরণ করে ঘন চিরসবুজ বনের গিরিপথ ও আদ্র পাতাঝরা বনে। পাতার আড়ালে ঘুরে ঘুরে এরা শিকার খোঁজে। শিকার করার ফাঁকে ফাঁকে এরা একটানা মধুর স্বরে শিস দেয়। অন্যান্য পাখির ডাক এরা চমৎকার অনুকরণ করতে পারে। এদের ডাকে বৈচিত্র্য রয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাস এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম। পাতার আড়ালে কাঠি, মূল, পাতা ও শ্যাওলা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বড় ও পেয়ালাকৃতির হয়। বাসা বানানো হলে ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ধূসর রঙের হয়।