বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

মাওয়ায় ভাঙন, বন্ধ নৌ চলাচল

মাওয়ায় ভাঙন, বন্ধ নৌ চলাচল

দেশের সব প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি গতকাল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল বিপদসীমার অন্তত ৭ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দেশের বেশির ভাগ চরাঞ্চল ও নিুাঞ্চল ডুবে গেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, অন্যান্য ফসল ও সবজির খেত নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা হতাশায় ডুবছেন। লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিনের পর দিন পার করছে। উজানে অর্থাৎ ভারতে নদীগুলোর উৎপত্তিস্থলের কাছে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এ বন্য দেখা দিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার আকস্মিক ভাঙনে মঙ্গলবার রাতে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুন সংযোগ সড়কসহ বেশ কয়েকটি দোকানঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে যায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটের সব ধরনের ফেরি পারাপার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২০০ গজ দেবে গেছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
মুন্সীগঞ্জ : মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার আকস্মিক ভাঙনে মঙ্গলবার রাতে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুন সংযোগ সড়কসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটের সব ধরনের ফেরি পারাপার। ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল সকালে ১ ও ২ নম্বর ঘাট দিয়ে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করলেও সকাল ৯টার দিকে ২ নম্বর ফেরিঘাটে ভাঙন দেখা দিলে সে ঘাটটিও বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পারে ৫ শতাধিক যান আটকা পড়ে। এদিকে গতকাল সকাল ৮টায় ভাঙনকবলিত মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় মন্ত্রী বলেন, যত দূর সম্ভব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে যাওয়া মাওয়ার ৩ নম্বর রো রো ফেরিঘাট চালুর চেষ্টা করা হবে।
জামালপুর : জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যমুনার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল সকালে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। একই হারে বাড়ছে ব্র?হ্মপুত্রসহ শাখা নদীগুলোর পানিও। এদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলার ৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাইবান্ধা : সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে বন্যায় অর্ধলাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকারি ত্রাণেও রয়েছে অপ্রতুলতা। এদিকে সাঘাটায় মঙ্গলবার ওয়াপদা বাঁধসংলগ্ন উত্তর সাথালিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধের ১০০ গজ ভেঙে ভেসে যাওয়ার পর এবার মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২০০ গজ দেবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া জানান, সাঘাটায় বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলাসহ সংস্কারকাজ চলছে।
কুড়িগ্রাম : চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তলিয়ে যাওয়ায় নতুন করে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও ভাঙনের মুখে পড়েছে বজরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত দেড় লাখ মানুষ। বানভাসি মানুষ কলা গাছের ভেলা, বাঁশের মাচা ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সিরাজগঞ্জ : জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী, সদর এবং কাজীপুরের ২২ ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল এবং বাঁধ অভ্যন্তরের প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে কুতুবপুরের ধলিরকান্দি থেকে কামালপুরের টিটুর মোড় পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

 

সর্বশেষ খবর