বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

১৮০০ স্পি­ন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন মাহবুবা পারভীন

১৮০০ স্পি­ন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন মাহবুবা পারভীন

গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে ১৮০০ স্পি­ন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। সেদিনের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন সেই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন। সেদিন গ্রেনেডের হামলায় মৃত প্রায় পারভীন বেঁচে আছেন না মৃত কেউ বুঝতেই পারেননি। আইভির পাশে যে তিনজন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন মাহবুবা পারভীন। মাহবুবা পারভীন গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে পড়ে থাকে। ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আশিষ কুমার মজুমদার সেখানে লাশ শনাক্ত করতে গেলে মাহবুবা পারভীনকে জীবিত দেখতে পান। ৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফিরে এলে দেশে তার চিকিৎসা ভালো না হওয়ায় শেখ হাসিনা তাকে ভারতের হাসপাতালে পাঠান। তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। মাথার দুটি স্পি­ন্টারের ব্যথায় মাঝে মধ্যেই পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে। ১০ বছর ধরে গ্রেনেডের স্পি­ন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পারভীন। ২১ আগস্ট এলেই এর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠেন, কান্নায় চোখ মুখ ভিজে যায় তার। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায় তাই এ ব্যাপারে তিনি আর স্মৃতিচারণ করতে চান না। পারভীন বলেন, আমার মাথার মধ্যে ২টি স্পি­ন্টার এখনো বের করা হয়নি। ব্যায়বহুল এই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। প্রয়োজন ৮/১০ লাখ টাকা। সাভারের ব্যাংক কলোনিতে দুই ছেলে মাসুদ ও নোশাদ এবং স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) এম এ মাসুদকে নিয়ে একটি ছোট্ট বাসায় বসবাস করছেন মাহবুবা পারভীন।  
কুদ্দুছের মা দেখেননি বিচার, আতিকের সন্তানের হাহাকার : চাঁদপুর প্রতিনিধি নেয়ামত হোসেন জানান, আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। হামলায় নিহত হন চাঁদপুরের দুই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন হাইমচরের আবদুল কুদ্দুছ (৩৫) ও মতলবের দিনমজুর আতিক উল্লাহ (৪২)। হাইমচরের আবদুল কুদ্দুছের মা আমেনা  বেগম সন্তান হত্যার বিচার না দেখে গত বছর মারা যান। আর আতিক উল্লাহর মা, স্ত্রী ও চার সন্তানের অভাবের মাঝে অতিবাহিত হচ্ছে সাংসারিক জীবন।
নিহত আবদুল কুদ্দুছ : কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হাইমচরের আবদুল কুদ্দুছ (৩৫)। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও বিচার দেখে যেতে পারেনি তার মা আমেনা বেগম। পুত্র হারানোর শোক নিয়েই পরপারে চলে গেছেন। জীবনসায়াহ্নে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অনুরোধ করে গেছেন- এই হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার হয়? আবদুল কুদ্দুছ হাইমচর উপজেলার ৩ নম্বর আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চর কৃষ্ণপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির সন্তান। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মাস্টার বলেন, পরিবারকে সরকারি অনুদান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আহম্মদ রেজা পাটোয়ারী বলেন, আবদুল কুদ্দুছ বিয়ে করেননি। তার চার ভাই আছেন। সরকারি অনুদান এলে পরিবারকে দেওয়া হয়।
আতিকের সন্তানদের হাহাকার : বাবা হারানোর ১০ বছর অতিবাহিত। সাংসারিক হাহাকার দূর করতে চলছে সন্তানদের অদম্য লেখাপড়া। বাবার অনুভূতি মায়ের আদর-সোহাগই এখন তাদের বড় প্রেরণা। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দ্বিতীয় দফা অনুদান। সেই টাকা ব্যাংকে রেখে এখন প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে ঐচ্ছিক টাকা তুলে কোনো রকমে চলছে ৬ সদস্যের সংসার।
নিহত আতিকের মেয়ের কথা : বাবার হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে তা জানা নেই আতিক উল্লাহর  দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়–য়া  মেয়ে তানিয়া আক্তারের। সে সরকারের কাছে গ্রেনেড হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশা করছেন। স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে ১০ বছর ধরে দিনাতিপাত করে আসছি। শত অভাবেও ৪ ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। বড় মেয়ে তানিয়া দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। এ ছাড়া মিথুন একাদশ শ্রেণিতে, মিন্টু ৭ম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে সাকিব ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। আতিকের স্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার। কিন্তু প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়ে থাকলেও গত বছর সাংবাদিকদের লেখালেখির পর প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অনুদান দিয়েছেন। ‘হেই টাকা ব্যাংকে রাইখা মাসে যা পাই, তা দিয়াই কোনোরকমে চলতাছি। এখন চাই- স্বামী হত্যার বিচার?’ স্বামী আতিক হত্যার বিচারের পাশাপাশি সন্তানদের সরকার চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আতিকের আত্মা শান্তি পাবে।

 

সর্বশেষ খবর