গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। বিশেষ করে মহানগরীর প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজটে ভোগান্তির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। গতকাল সরকারি ছুটির দিনেও যানজটের ধকল থেকে রেহাই মেলেনি। বরং গাড়ির জট প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে অলিগলি, মহল্লাতেও বিস্তৃত হয়েছে। এদিকে রাজধানীর নিচু এলাকাসমূহের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার মানুষ। টানা বর্ষণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সারা দিন ঝরঝর বৃষ্টি, কখনো থেমে কখনো আকাশ ভেঙে। গত তিন দিনের বর্ষণে প্রায় থমকে গেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ড্রেন, নর্দমার ময়লা আর পানিতে একাকার অধিকাংশ এলাকার রাস্তা। ঘরের বাইরে পা ফেলতেই ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠছে। রাতভর ভারী বর্ষণের পর গতকাল সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, বনানী, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, রূপনগর, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ অনেক এলাকার রাস্তাঘাট। এর সঙ্গে তীব্র যানজট যুক্ত হওয়ায় পথচলতি মানুষ পড়ে দুর্ভোগে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্কুলফেরত শিক্ষার্থীরাও পড়ে বিড়ম্বনায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের পথে পথে একহাঁটু পানির স্রোত বইছে। এর উপর বৃষ্টি তো চলছেই। আরও বেশি পানির নিচে নিমজ্জিত থাকা রাস্তাটুকু পার হওয়ার মতো রিকশা পর্যন্ত তারা পাচ্ছে না। ফলে জুতা, মোজা, স্কুল ড্রেস ভিজিয়েই তাদের স্কুলে পৌঁছাতে হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর নিম্নচাপ জনিত টানা বৃষ্টির কারণে বহুমাত্রিক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটে খানাখন্দকের কারণে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, শান্তিবাগ, যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, সমগ্র গুলিস্তান এলাকা, নবাবপুর রোড, মিরপুর ও উত্তরার বিভিন্ন সড়কে যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহান নগরবাসী। এ ছাড়া বাংলামোটর, পান্থপথসহ ভিআইপি সড়কগুলোতেও লেগে ছিল যানজট। গুলশান-১ ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের এলাকায় পানি জমে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মহাখালী-ফার্মগেট সড়কে সারা দিনই থেমে থেমে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সায়েদাবাদ টার্মিনাল-সংলগ্ন প্রতিটি সড়কেও ছিল যানজটের ধকল। বারিধারা, নতুনবাজার এলাকা থেকে বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করেছে গরুর গাড়ি স্টাইলে। কয়েক গজ পরপরই গাড়ি থামিয়ে রাস্তা সচল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। এ সড়কে চলাচলকারী লোকজন দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে আটকে থেকে রীতিমতো ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পড়েন। যাত্রীদের অনেকেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্য পথে রওনা দিতে বাধ্য হন। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়েছে, মূলত বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এবং সেই সঙ্গে ঈদের কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় থাকায় বেশ কয়েকটি সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে বৃষ্টির পানি নেমে গেলেই যানজট সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
নিচু এলাকা জলে ভাসা : টানা বৃষ্টিজনিত এ জলাবদ্ধতায় রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, বাসাবো-নন্দীপাড়া, রামপুরা, বাড্ডা, দক্ষিণখান-উত্তরখান ও তুরাগ থানার নিচু এলাকার বাসিন্দারা বর্ণনাতীত দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। তুরাগ ধউর এলাকার বাসিন্দা সবুজ তাকবীর জানান, বৃষ্টির পানিতে প্রতিটি মহল্লায় পানি থই থই করছে। শতকরা ৫০ ভাগ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বাসাবো নন্দীপাড়ার বাসিন্দা খোকন মিয়া জানান, হাঁটু থেকে কোমরপানি ডিঙিয়ে তবেই বাড়িঘর থেকে বেরোতে হচ্ছে। সড়কে উঠেও শান্তি নেই। একহাঁটু কাদার মাখামাখিতে রীতিমতো পথচলা মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। মুগদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, মজিবর রহমান মজু, আবদুল হামিদসহ কয়েকজন জানান, বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় তিন-চার দিন ধরে অনেক মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রতিটি গলিতে ময়লা-নোংরা পানির সরোবর। এতে পা চুবিয়ে যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মানিকনগরের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ বলেন, মানিকনগর, ধলপুর, মান্ডাসহ আশপাশের আট-নয়টি মহল্লার বহু বাড়িঘরে একহাঁটু পানি জমেছে। পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি না দেখলে বোঝার উপায় নেই। মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা সরকার জামাল জানান, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা থেকে শুরু করে রামপুরা বনশ্রী এলাকা পর্যন্ত বহু মহল্লার বাড়িঘরে রান্নাবান্না পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। এক কোমর পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়িঘর। ডুবে আছে গ্যাসের চুলা। কেউ কেউ একতলা বাসার ছাদে অস্থায়ী ডেরা বানিয়ে বসবাস করলেও তাদের খাওয়াদাওয়া চলছে হোটেলনির্ভর। এতে রোজাদারদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কখনো রিমঝিম, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনোবা ঝিরিঝিরি। এভাবেই অবিরাম বর্ষণ ছলছে সারা দেশে। টানা বৃৃষ্টি এলোমেলো করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা, মসজিদ, এমনকি থাকার ঘরেও হাঁটুপানি। তাই ভোগান্তি তাদের প্রতিমুহূর্তের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল থেকেই হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজধানীতে। বৃষ্টির পানি জমে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, রামপুরা, উলন, মৌচাক, মধুবাগ, গুলবাগ, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মিরপুরের কালশী থেকে পূরবী সিনেমা হল-সংলগ্ন সড়ক প্রায় কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে।
ক্ষুব্ধ মেয়র আনিসুল : ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মিরপুর ও রূপনগরের জলাবদ্ধতায় আটকে পড়া বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের পর গতকাল খিলক্ষেত ও উত্তরার বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখেছেন। তিনি জলাবদ্ধতার জন্য বিভিন্ন খাল-নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি ওয়াসা ও রাজউকের চরম ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘এভাবে বৃষ্টিতে নগরবাসী ভাসতে থাকবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব, তা হতে পারে না। যার যা দায়িত্ব তা পালন করুন। আমাদের অনুরোধ শুনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কাজ সম্পাদনে বাধ্য করা হবে।’ এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সমন্বয়হীনতার কারণেই রাজধানীর সড়কগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ খাল ভরাটের কারণে এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় দুঃখজনক হলো, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ঢাকাবাসীর এ দুর্গতি। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি মাটিতে চুষে নেওয়ার জায়গা নেই। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে রাজউক সিটি করপোরেশনকে দায়ী করে আর সিটি করপোরেশন দায়ী করে ওয়াসাকে।
আজ স্বাভাবিক হতে পারে : আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ভোর ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। গতকাল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে টেকনাফে। ভোর থেকে দিনের প্রথম ছয় ঘণ্টায় সেখানে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় এ অবস্থা চললেও আজ পরিস্থিতির উন্নতির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শিরোনাম
- যাত্রাবাড়ীতে বোন জামাইয়ের কোপে ব্যবসায়ী নিহত
- ফাইনালে যেতে পাঞ্জাবকে ২০৪ রানের চ্যালেঞ্জ দিল মুম্বাই
- মাগুরায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
- পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ বাংলাদেশের
- আন্তর্জাতিক কোচ হতে চান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ
- তানজিদ-ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ
- বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেলেন কিউবা মিচেল
- সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপরে
- জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া গণতন্ত্রের বিজয় : রাশেদ প্রধান
- সিইসির সঙ্গে সোমবার জামায়াতের বৈঠক
- সব রেকর্ড ভেঙে ১১ মাসে রেমিট্যান্স এলো সাড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার
- সোমবার ৩টায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা
- রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু আগামীকাল
- ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
- রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে যানচলাচল বিঘ্ন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
- নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জনগণ হতাশ : মেজর হাফিজ
- মাদারীপুর সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
- জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরে দোয়া মাহফিল
- বড়াইগ্রাম পৌরসভায় সাড়ে ৫১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
- রাফায় ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৩০
জলাবদ্ধ ঢাকায় যানজট জনজট
সাঈদুর রহমান রিমন
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর