সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা টি-২০

ব্যাটিং ব্যর্থতায় টাইগারদের পরাজয়

ম্যাচ শেষ। সাকিব, মুশফিকরা সাজঘরে ফিরলেও মাঠে রয়ে যান অধিনায়ক মাশরাফি। মাঠের এক কোণায় কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে এবং তিন নির্বাচক ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় কথা বলেন। কি নিয়ে এই আলোচনা? দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম টি-২০ ম্যাচের করুণ হারের পর্যালোচনা, না পরের ম্যাচের আগাম পরিকল্পনা আঁকা! টাইগারদের থিঙ্ক ট্যাঙ্করা যাই ভাবুন, আর যাই নিয়ে আলোচনা করুন, ধ্রুব সত্য এটাই বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি টি-২০ দল হয়ে উঠতে পারেনি। টি-২০ ম্যাচের আবহের সঙ্গে নিজেদের ঠিক মানিয়ে নিতে পারেননি মাশরাফিরা। মানিয়ে নিতে না পারায় দুই ম্যাচ টি-২০ সিরিজের প্রথমটিতে গতকাল ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে গেল ৫২ রানে। নিজেদের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে যা চতুর্থ বড় এবং প্রোটিয়াদের কাছে টানা তৃতীয় হার। আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে সাফল্যের গ্রাফের মসৃণ পথে উঠে আসেন মাশরাফিরা। বিশ্বকাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের আÍবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দেন পাকিস্তানকে। হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় সিক্ত করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ক্রিকেট ইতিহাসে কালিমা লেপে দেন মাশরাফিরা। এরপর ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়লাভ করে। ঘরের মাঠে ডিসেম্বর থেকে ১১ ওয়ানডের টানা ১০ জয় এবং পাকিস্তানকে টি-২০ ম্যাচে হারানোর মোমেন্টাম নিয়েই গতকাল মাশরাফিরা নেমেছিলেন ব্যাট ও বলের লড়াইয়ে। লড়াইয়ে যেন জিততে পারে, তাই উইকেট বানান হয়েছিল স্পিনারদের কথা মাথায় রেখেই। দিনের শুরুতে তিন স্পিনার আরাফাত সানি, নাসির হোসেন ও সাকিব আল হাসান দুরন্ত বোলিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেধে রাখেন ১৪৮ রানে। টি-২০ ক্রিকেটে দেড়শ’র নিচে স্কোর এখন অনায়শলব্ধ টার্গেট, সেখানে ঘরের মাঠ, পরিচিত পরিবেশ এবং সর্বোপরি টানা জয়ের মোমেন্টাম-সবকিছু যখন সঙ্গী এবং পাশে, তখন জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা! কিন্তু ক্রিকেট যেমন মোস্ট ফানি গেম, তেমনি মোস্ট মিষ্টিরিয়াস গেমও বটে। তাই ১৪৯ রানের টার্গেটে বাংলাদেশের ইনিংস থমকে যায় ৯৬ রানে। হেরে যায় ৫২ রানে। পেসারদের বিপক্ষে ভারত দুর্বল ভাবনায় চার পেসার খেলিয়ে বাজিমাত করেছিল টাইগাররা। মুস্তাফিজুর রহমানের চমকে চমকিত সবার ধারণা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও একই ছবির দেখা মিলবে! কিন্তু কোথায় কি? স্পিনের বিপক্ষে প্রোটিয়ারা দুর্বল ভেবে চার স্পিনার দিয়ে সাজায় একাদশ। ভারত সিরিজের মতোই টোটকা এবারও কাজে লাগে। আরাফাত, নাসির, সাকিবরা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে প্রোটিয়াদের ১৪৮ রানে আটকে রাখে। দুরন্ত ফর্মের প্রোটিয়াসদের দেড়শ রানের নিচে আটকে রাখার কৃতিত্ব অবশ্যই পাবেন স্পিনাররা। ধীরলয়ের উইকেটে ২০ ওভারের ১৩টিই করেছেন চার স্পিনার। রান দিয়েছেন ৯৬।
টার্গেট ১৪৯। এমন রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। এপ্রিলে পাকিস্তানের ১৪১ রান তাড়া করে জিতেছিল ৭ উইকেটে। তাই ১৪৯ রান নিয়ে ললাট কুঞ্চিত হওয়ার কিছুই ছিল না। ব্যাটিংয়ে নামার পর তাই হলো। প্রোটিয়াস ফাস্ট বোলার কাইলি অ্যাবট, রাবাদাদের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও খেঁই হারিয়ে ফেলে দুই স্পিনার ফাঙ্গিসো ও জেপি ডুমিনো বোলিংয়ে আসার পর। দুই স্পিনার এবং কাটার বোলার ডেবি ওয়েইসের বোলিংয়ে তালগোল হারিয়ে ফেলে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ৫ ওভার সমানতালে দৌড়ালেও শেষ পর্যন্ত পারেনি। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেনরা যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে প্রশ্নটা আবারও উঠে এসেছে, এরা কি শুধু ওয়ানডে খেলার জন্যই নিজেদের প্রস্তুত করছেন। কাল স্পিনাররা যতটা ভালো বোলিং করেছেন, ঠিক ততটাই উল্টো ব্যাটসম্যানরা। তাদের ব্যর্থতায় সুযোগ থাকার পরও মাচটি হেরেছে বাংলাদেশ। এই হার কি তাহলে পরের ম্যাচগুলোর আগাম বার্তা?

সর্বশেষ খবর