শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশকে আর অস্থিতিশীল করা যাবে না --প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই বিদেশির হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আর অস্থিতিশীল করা যাবে না। বাংলাদেশের অর্জন যখন বিদেশে প্রশংসিত হয়, তখনই এমন ঘটনা ঘটানো হয় যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। আজকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে পারবে না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল সকালে মিরপুর সেনানিবাসের          ডিওএইচএসএতে সশস্ত্রবাহিনীর শহীদ কর্মকর্তাদের পরিবারবর্গের জন্য নবনির্মিত বহুতল ভবন ‘অপরাজিতা’ এবং মিরপুর সেনানিবাসে সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের নবনির্মিত একাডেমি ভবন ‘শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় শহীদ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারবর্গকে ৭৪টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে মিরপুর ডিওএইচএসএ’এর অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ ও এমপিবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লে. জেনারেল আনোয়ার হোসেন, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও লজিস্টিক্স এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খানসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রংপুরে যিনি (জাপানি) মারা গেছেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, নামাজ পড়তেন। অথচ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছি এবং এর তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি বলেন, ঘটনাগুলো দেখে মনে হয়, পরিকল্পিতভাবে কোনো মহল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অব্যাহতভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা ও কর্মঘণ্টার বিশাল অংশ এতে ব্যয় হচ্ছে। যদি এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজন না হতো তাহলে দেশের আরও উন্নয়নে আমাদের প্রচেষ্টা ও শ্রম কাজ লাগাতে পারতাম। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় শাহাদাতবরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের কল্যাণে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা আমি ভালোভাবে বুঝি। পিলখানা হত্যাযজ্ঞে জড়িত অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা হয়েছে এবং হত্যাযজ্ঞের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়নের জন্য তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তার সরকার বাংলাদেশ আর্মির কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানে একাডেমি ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিরক্ষাবাহিনীর আবাসিক সমস্যা সমাধানে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৩৬৩ কোটি টাকায় ৯৭টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন প্রকল্প ও ডিওএইচএসএ’এর সম্প্রসারণ। জলসিঁড়ি প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৮০টি প্লট কর্মকর্তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশ গঠনে সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর শ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে যে তারা যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেয়, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে নারী কন্টিনজেন্ট পাঠানোর অনুরোধের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বৈশ্বিক এ আকাক্সক্ষায় সম্মতি দিয়েছে। জাতিসংঘের এ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী কন্টিনজেন্ট গড়ে তোলা হবে। তিনি সশস্ত্রবাহিনীর আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তার সরকারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সংস্থা এখন ভালোভাবে চলছে এবং তা লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল লি. কোম্পানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের ধারা বেগবান করতে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক করিডোরের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর