সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য সংশোধনের চাপের মধ্যে ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে ভুক্তভোগী এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পক্ষ থেকে। শুধু সরকারি কর্মকর্তাই নন, লাখো নাগরিকের পরিচয়পত্রে মিলছে ভুল। ভুক্তভোগীরা এর ‘সম্পূর্ণ দায়’ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ওপর দিয়ে বলছেন, তথ্য লিপিবদ্ধ করার সময় তাদের অসচেতনতা সমস্যা বাড়িয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পাল্টা অভিযোগ চাকুরেদের প্রতি। তারা মনে করছে, অনেক চাকুরে বয়স কমিয়ে চাকরিতে থাকার চেষ্টা চালানোয় তথ্য বিভ্রাটের এ ঝঞ্ঝাট।
নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নাম এনআইডিতে এসেছে নাজির উদ্দিন। বেতন কাঠামো নির্ধারণে এনআইডিতে নাম সংশোধন করে নাসির উদ্দিন করার আবেদন করেছেন তিনি। আরেকজনের নাম আফছার; এনআইডিতে রয়েছে কাউছার। অন্য এক কর্মকর্তার জন্ম তারিখ ১ ডিসেম্বর ১৯৬৬; পরিচয়পত্রে হয়ে গেছে ১ জানুয়ারি ১৯৬৬। কারও কারও বাবার নাম এসেছে মায়ের ঘরে; মায়ের জায়গায় দেখা যাচ্ছে স্বামীর নাম। নামের বানান ও জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য চার লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবেদন আসার কথা জানিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। অধিকাংশেরই নাম ও জন্ম তারিখে ভুল। এ ছাড়া তথ্য পরিবর্তনের আবেদনও পড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশাল এ সংখ্যাকে ‘বিস্ময়কর’ উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংগ্রহকারী ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভুল নয়। তারা বলেন, নামের বানানে ভুল ধরা পড়লেও বয়স কম হওয়ার কারণ কী? এটাকে তো সংশোধন বলা যায় না; বলতে হবে তথ্য পরিবর্তনের আবেদন। এনআইডির কর্মকর্তারা জানান, অনেক সরকারি কর্মকর্তা ‘সার্টিফিকেটে বয়স কম দেখিয়ে’ চাকরি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে বয়সের সঠিক তথ্য যাচাই করলে দেখা যাবে, তাদের অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। পরিচয়পত্রের সঙ্গে সার্টিফিকেটের বয়সের এমন তারতম্য অনেক সন্দেহেরও জন্ম দিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তনসহ তথ্য অসঙ্গতির বিষয়টি এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে দেওয়ার কথা জানান তারা। সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের বয়সের এত হেরফের হওয়ার তো কথা নয়। আমরা চাচ্ছি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আনতে। সে ক্ষেত্রে মাসখানেকের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তালিকা পাঠানো হবে।
এদিকে নিবন্ধন অনুবিভাগের ‘সন্দেহ’কে আমলে নিচ্ছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, নিজেদের ভুল ঢাকতে এনআইডি-সংশ্লিষ্টরা এ ‘চাতুরীর’ আশ্রয় নিয়েছেন। নিবন্ধন ফরমে সঠিক তথ্য দিয়েছি। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখেছি উল্টো এসেছে। তাহলে ভুল কোথায় হয়েছে? ডাটা এন্ট্রির সময় উল্টোভাবে করায় এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বলে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে উপজেলা পর্যায়ে ‘তথ্য পরিবর্তনের’ আবেদন নিয়েও ইসিতে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। মাসের পর মাস অপেক্ষার পরও সেখানকার নাগরিকরা সংশোধিত এনআইডি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ‘অনিষ্পন্ন’ আবেদনের বিষয়গুলো সম্প্রতি কমিশনের সভায় তুলেছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক। সভায় এ নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য তার পক্ষ থেকে ‘অনানুষ্ঠানিক’ নোট দেওয়া হয়েছে বলেও কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।