মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বগুড়ায় হাঁটুজলের নদ-নদী

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় হাঁটুজলের নদ-নদী

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালী নদীর তলদেশ এখন ফসলের মাঠ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ার বেশির ভাগ নদ-নদীতে পানি নেই। তবে কোথাও কোথাও হাঁটুজল মেলে। শুকিয়ে যাওয়া এসব নদীর বুকজুড়ে চলছে ফসল আবাদের কাজ। বগুড়ার প্রধান নদী যমুনা। এতে মোটামুটি পানি থাকলেও বাঙালি, করতোয়া, নাগর, ইছামতী নদ-নদীর পানি এখন হাঁটুসমান। জেলার চারপাশে থাকা নদ-নদীর সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি বিল। যেমন যমুনা, বাঙালি, করতোয়া, নাগর, ইছামতী, সুখদহ, মহিষাবান, চন্দ্রাবতী, ভাদাই নদ-নদীর সঙ্গে রয়েছে বেতগাড়ি, সুবিল, এরুলিয়া, পোড়াদহ, নুরুইলের বিল। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো সুবিল বিল। শহরের কাটনারপাড়া উপশহর এলাকায় সুবিল বিলের বেশির ভাগ এলাকা দখল ও মাটি ভরাট করে জমি বিক্রি করে ভবন পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। একইভাবে করতোয়ার পাড় আর ঘাট দখল করে বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। পানি দূষণ, পলি পড়ে ভরাট হওয়া, চাষাবাদ করা, অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, ড্রেনের প্রবাহ, ময়লা-অবর্জনা ফেলা, বালু উত্তোলন, কলকারখানার বর্জ্য ফেলাসহ দুই পাড় ইচ্ছামতো দখল হওয়ায় শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মূল করতোয়া এখন সবচেয়ে বড় ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, ১২২ কিলোমিটার করতোয়া নদীর ১১ কিলোমিটারে নাব্য ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফাইলবন্দী হয়ে আছে। নাব্য ফেরাতে ২০০৬ সালেও একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সে রিপোর্টও আলোর মুখ দেখেনি। ওই সময় নদীর দুই পাড়ে রাস্তা নির্মাণ, ড্রেজিং, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ব্রিজ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ মিলিয়ে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকার বাজেটও পেশ করা হয়। ওই রিপোর্টটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সার্ভে করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সূত্র জানিয়েছেন, করতোয়ার নাব্য ও পানিপ্রবাহে একাধিকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। নতুন করে আবারও আলোচনা চলছে। আগের প্রস্তাবগুলো পাস করা হলে করতোয়া প্রাণ ফিরে পাবে। এ ব্যাপারে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, ড্রেনের পানি ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে করতোয়া দূষণ হচ্ছে বহুদিন থেকেই। এ ছাড়া অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থানে দখল হওয়ায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে নদী। দূষণ ও দখল থেকে রক্ষা করতে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পানিসম্পদমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। শুধু করতোয়াই নয়, দূষণ আর দখলের কবলে পড়েছে নাগর, ইছামতী, বাঙালি নদ-নদীও। দখলের কবলে পড়েই বাঙালি আর নাগর এখন আর নদ-নদী নেই। নদ-নদীবক্ষে চলছে ফসলের চাষ। একইভাবে ধুনট উপজেলায় বহমান যমুনা নদী জুড়ে হেক্টরের পর হেক্টর ধান চাষ হচ্ছে। স্থানীয় ভূমিহীন চাষিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে বোরো ধান চাষ করে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন। এ ছাড়া যমুনাপাড়ের লোকজন জানান, শুকনো মৌসুমের শুরুতে যমুনার পানি কমতে থাকে। আর পানি কমে গেলে চর জেগে ওঠে। সেই চরের পলি পড়া জমিতে নদীর পানি সেচ দিয়ে ভূমিহীন চাষিরা বোরো চাষ করেন। চলতি বছরও নদীবক্ষে বোরোর চাষ হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর