গাভী পালন করে এখন ফরিদপুরের ‘মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন একসময়ের দরিদ্র পারুল বেগম। গত কয়েক বছর ধরে মেধা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে দরিদ্রতাকে জয় করেছেন তিনি। পারুল বেগমের খামারে এখন সাতটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী রয়েছে। আছে দুটি বাছুরও। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। জমিজমাও করেছেন বেশ। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেছেন কয়েক লাখ টাকা। জেলার গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ী সড়কের পারুল বেগম একসময় স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ কষ্টে দিন কাটাতেন। স্বামী মো. পান্নু ফকির কৃষিকাজ করতেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসারে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারুল বেগম পণ করেন। যেভাবেই হোক তিনি আয়-রোজগারের চেষ্টা করবেন। ১০ বছর আগে স্থানীয় সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি বাছুর কেনেন। কিন্তু সেই বাছুরটিকে লালন-পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন তিনি। একসময় অল্প টাকায় বাছুরটি বিক্রি করে দেন। বাছুর বিক্রির টাকা ও এসডিসি থেকে আরও কিছু টাকা নিয়ে একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী কেনেন। এরপর থেকে আর পারুল বেগমের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গাভী পালনের পাশাপাশি পারুল বেগম এসডিসি থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এখন গরুর কোনো সমস্যা হলে তাকে ছুটে যেতে হয় না পশু ডাক্তারের কাছে। তিনি নিজেই সবকিছু দেখভাল করেন। গরুকে গোসল করানো, দুধ দোয়ানো, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে গরুর যত্ন তিনি নিজেই করেন। একটি গরু থেকে পারুলের খামারে এখন সাতটি গরু হয়েছে। নিজের বাড়ির ৯ শতাংশ জমির পাশাপাশি আরও ২৩ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখানে চাষ করছেন বিদেশি ঘাস।
সেই ঘাস নিজের গরুকে খাওয়ানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রিও করছেন। তার খামারে কাজ করছেন দুজন শ্রমিক। প্রতিদিন সাতটি গাভী থেকে দুধ পান ১০০ কেজি। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি কয়েকজন পাইকারের কাছেও দুধ বিক্রি করেন। প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করে তার আয় হয় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সবকিছুর খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তার লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। প্রতি মাসের টাকা জমিয়ে তিনি জমি কিনছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায় তার লগ্নি রয়েছে ৫ লাখ টাকা। গাভী পালন করে ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার ‘মডেল’ হিসেবে ফরিদপুরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পারুল। পারুল বেগমের ‘দিনবদলের’ গল্প এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেছে। পারুল বেগমের দরিদ্রতাকে জয় করাতে অনেক নারীই এখন গাভী পালনের দিকে ঝুঁকছেন। পারুল বেগম তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন এবং নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। একজন মানুষ কোনো কাজকে অবহেলা আর অবজ্ঞা না করে কঠোর পরিশ্রম করলে তিনি কখনো ‘না খেয়ে মরেন না’ এমনটিই জানালেন দরিদ্রতাকে জয় করা নায়িকা পারুল বেগম।