শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বেতন বোনাস নিয়ে গার্মেন্টে অস্থিরতা

মালিকদের দিকে তাকিয়ে লাখ লাখ শ্রমিক, কয়েকটিতে সমস্যা তৈরির আশঙ্কা

জিন্নাতুন নূর

বেতন বোনাস নিয়ে গার্মেন্টে অস্থিরতা

রোজার প্রথম থেকেই এবার ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন ও বোনাস ১৫ থেকে ২১ রোজার মধ্যে দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়। এমনকি শ্রমিক, শ্রমিক নেতা ও পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর কমিটি সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সভার আহ্বায়ক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, ঈদের আগেই তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোনাস দিতে হবে। কিন্তু তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সর্বশেষ মনিটরিং প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বেশ কয়েকটি কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জুনের বেতন দেওয়ার কথা ভাবলেও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মালিকরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী বোনাস দেবেন। সেক্ষেত্রে কারখানা মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ের পর, মাসের শেষে শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। আর স্বল্প সংখ্যক যে কারখানা মালিকরা ঈদের আগে আর্থিক সমস্যার কারণে বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়বেন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মনিটরিং করে তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ফলে আসছে ঈদ উৎসবে এ খাতে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক ও তার পরিবার কারখানা মালিকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

শ্রমিক নেতাদের মতে, প্রতি ঈদের মতো এবারও মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে এক ধরনের টালবাহানা চলছে। অনেক মালিক নিজের লাভের জন্য শ্রমিকদের শ্রমের টাকা আটকে রাখেন। যা অমানবিক। তারা জানান, মালিকদের ঈদের আগে সুবিধাজনক সময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা উচিত। তাদের যুক্তি ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষমতা না থাকায় শ্রমিকরা তাদের পাওনা নিয়ে মালিকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার সুযোগ পান না। ফলে ঈদ এলে প্রতিবারই তারা এক ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েন। নিজেদের শ্রমের টাকা সময়মতো পাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। এরই মধ্যে বকেয়া বেতনের (মে ও জুন মাস) দাবিতে গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার কাতরা এলাকায় নন্দন অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন।

বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় আন্তরিক। পকেটে টাকা থাকলে মালিকরা কারও নির্দেশের অপেক্ষা না করেই শ্রমিকের পাওনা দিয়ে দেন। শ্রম আইন অনুযায়ী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জুনের বেতন দেওয়া হবে। তবে বোনাস দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সুবিধাজনক সময়ে বোনাস দেওয়া হবে। যে কারখানাগুলো বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যায় পড়বে তাদের আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করব। তবে বিজিএমইএর সভাপতি এও বলেন যে, শ্রমিকরা যে রোজার মাঝামাঝিতে ঈদের কেনাকাটা শুরু করেন এমন নয়, তারা সাধারণত ঈদের আগে আগেই কেনাকাটা সারেন।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজ্জেকুজ্জামান রতন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী মাসের শুরুতে ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা বলা আছে। সে হিসেবে ঈদের আগে মালিকরা বেতন পরিশোধে বাধ্য। ঈদ উৎসব আকস্মিক চলে আসে না। এ কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের সুবিধাজনক সময়ে ঈদ বোনাস দেওয়া উচিত। আর সময়মতো শ্রমের পাওনা শ্রমিকের মানবিক অধিকারই নয়, এটি তার ফেস্টিবেল রাইটও। তার মতে, কিছু কারখানার মালিক মনে করেন যে, শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের টাকা আটকাতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা যাবে। সাধারণত ঢাকার বাইরের কিছু পোশাক কারখানা, ছোট কারখানা ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা দেওয়ার ব্যাপারে ঝামেলা তৈরি করে। এর বাইরে কিছু বড় কারখানাও শ্রমিকদের অর্ধেক টাকা দিয়ে বাকি টাকা ঝুলিয়ে রাখে।

সর্বশেষ খবর