শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন কর্তাদের

ফরাসউদ্দিন তদন্তে অস্থির বাংলাদেশ ব্যাংক

মানিক মুনতাসির

রিজার্ভ চুরি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিরাজ করছে অস্থিরতা। দায়ী ছয় কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে মামলাও করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন খবর এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর যাদের বাধ্যতামূলক অবসর বা অপসারণ করা হয়েছে তাদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। এদিকে ডিলিং রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ জন কর্মকর্তা স্বেচ্ছা অবসরের জন্য মৌখিক আবেদন করেছেন গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, তারা গত বুধবার গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বদলির অনুরোধ করেছেন। তারা বলেছেন, আতঙ্কের কারণে তারা কাজ করতে পারছেন না। ডিলিং রুমের বাইরে যে কোনো বিভাগ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য কোনো শাখায় তাদের বদলি করা হলে কাজের গতি বাড়বে। দফায় দফায় পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইডি, এফবিআইর জিজ্ঞাসাবাদে ব্যক্তিগতভাবে তারা মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে গভর্নরকে জানিয়েছেন। অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাও স্বেচ্ছা বদলির মৌখিক আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের দাবি, অন্য কোনো বিভাগে তাদের বদলি করা হলে মানসিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের মাঝে কাজের গতি বাড়বে। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে তাদের সঙ্গে ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তারা স্বাভাবিক আচরণ করছেন না। কাজের ক্ষেত্রে তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন না বলে তাদের অভিযোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদনে যে ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তারাও স্বেচ্ছা অবসরের ব্যাপারে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন গভর্নরকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে নিম্ন থেকে শীর্ষ পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযানের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে অন্য বিভাগ থেকে পৃথক করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে কোনো সময়ই তার এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যাদের দায়ী করা হয়েছে তাদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। যারা স্বেচ্ছা অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগকে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত ফাইল এবং কর্মজীবনের বৃত্তান্তও জানতে চেয়েছেন গভর্নর। আর স্বেচ্ছা বদলির ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এটা তার একক সিদ্ধান্ত নয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ এবং প্রশাসন বিভাগের পরামর্শও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। ২০ জুন তার দেশে ফেরার কথা। তিনি দেশে ফেরার পর ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন, কাঠামোগত পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ডিলিং রুমের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে খুব শিগগিরই। পাশাপাশি চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইন ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর