সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পর্যটন কেন্দ্রে এখনো ঈদের আমেজ

প্রতিদিন ডেস্ক

পর্যটন কেন্দ্রে এখনো ঈদের আমেজ

ঈদের আনন্দে মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত (ওপরে) ও গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপচে পড়া ভিড় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদের ছুটিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামে। দেশি-বিদেশি নানা বয়সের তরুণ-তরুণীদের আগমনে পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখনো উৎসবমুখর। সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেল ও শপিং মলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো পর্যটকের ঢল নেমেছে। দেশি-বিদেশি নানা বয়সের যুবক-যুবতীদের আগমনে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে শনিবার দিনভর কুয়াকাটা সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এর ফলে আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেল ও শপিং মলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। আগত পর্যটকরা ঈদের লম্বা ছুটিতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এখানে ২-৩ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন বলে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন। এ অবস্থা আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এদিকে পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, র‌্যাবসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে বলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিপক কুমার রায় জানিয়েছেন। স্থানীয় রাখাইন মার্কেট, নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলখ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুঁটকি পল্লী, লাল কাঁকড়ার চর ও সৈকতের জিরো পয়েন্ট শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত। এ ছাড়া ঈদের লম্বা ছুটিতে অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের সিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে বলে মালিকরা জানিয়েছেন। ঢাকার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. রেজাউল করিম জানান, দীর্ঘ ছুটির কথা চিন্তা করে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। কিন্তু আজকের কুয়াকাটা দেখে হতবাগ হলাম। মনে হয় সাগরের ঢেউয়ের তাণ্ডবে সৈকত এখন বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী হাজী ইকবাল হোসেন ঢাকা থেকে সপরিবারে ঈদের অনন্দ উপভোগ করতে প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় আসেন। তিনি বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে বিমোহিত হয়েছি। জার্মানির মুসলিম নাগরিক মোহাম্মদ আমিন ভাঙা বাংলা ভাষায় জানান, এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো। এ বছর এই কুয়াকাটায় ঈদ করেছি। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোর্ড মালিক সমিতির পরিচালক হোসাইন আমির জানান, এ বছর পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। ইলিশ পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও জঙ্গিবাদকে উপেক্ষা করে কুয়াকাটায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আবাসিক হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাজের জিএম জয়নুল আবেদীন চোখাদ্দার জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এসেছেন। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ জানান, পর্যটকদের আগমনে এখানকার হোটেল-মোটেলগুলোতে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে। কাউকে সন্দেহভাজন গেস্ট মনে হলে পুলিশকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবান : পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ি কন্যা বান্দরবান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন পাহাড়, ঝিরি-ঝর্ণা আর সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির টানে। ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটির কারণে এখন পর্যটকে ভরপুর। হোটেল মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন সব হোটেল-মোটেল পর্যটকে ভরপুর। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পয়েন্টে পয়েন্টে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট। জেলায় রয়েছে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেউক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক। নীলাচলে দাঁড়ালে পাহাড় আর আকাশের মিতালী, দূরে সবুজ বন কিংবা চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আবছা আবছা উপভোগ করা যায়।

মৌলভীবাজার : পর্যটন স্পটগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত ছিল। মৌলভীবাজারের নৈসর্গের এ প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে ছুটে এসেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। উপচে পড়া ভিড় ছিল প্রায় সবকটি পর্যটন স্পটেই। বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, কমলগঞ্জের নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক ও হাম হাম জলপ্রপাত, ধলাই সীমান্তের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, নীল কণ্ঠের সাত রঙের চা, মনু ব্যারাজ, কুলাউড়ার দোলনচাপা ইকোপার্ক, গাজীপুরের গগন টিলা, পৃথিমপাশার নবাববাড়ী, মুরইছড়া ইকোপার্কসহ সব উপজেলার চা বাগানগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত ছিল। হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে তিন দিন এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

সিলেট : ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ঢল নামে মানুষের। পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিয়াসী নানা বয়সের লোকজন। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল জাফলং, লালাখাল, রাতারগুল, বিছানাকান্দিতে। এ ছাড়া চা বাগানগুলোতেও ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। জাফলংয়ে বেড়াতে আসা শেরপুরের আজাদ মাহফুজ জানান, ঈদের ছুটিতে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে জাফলং বেড়াতে এসেছেন।

রংপুর : ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে উঠেছে রংপুরের বিনোদনকেন্দ্রগুলো। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা সব বয়সী মানুষের পদচারণায় বিনোদনকেন্দ্রগুলো মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্মল আনন্দে মেতে ওঠেন দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন থেকে নানা বয়সের মানুষ ছুটে আসে রংপুর চিড়িয়াখানা ও জাদুঘর, চিকলি পার্ক, প্রয়াস, ভিন্ন জগৎ, আনন্দ নগর, সুরভি উদ্যান, ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাস, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে। প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। শনিবারও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিনোদনকেন্দ্র ‘প্রয়াসে’ কথা হয় পুলিশ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িতে খুব একটা আসা হয় না। তাই সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।

বাগেরহাট : ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, হজরত খানজাহান (রহ.) মাজার ও সুন্দরবনের করমজলে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ জেলার বিনোদনের স্পটগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার মানুষসহ বিদেশি পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল এসব স্পটে। দর্শনার্থীরা বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে এসেছি।

সর্বশেষ খবর