বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফের আতঙ্ক পদ্মাতীরে

ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে ভিটেমাটি, খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

ফের আতঙ্ক পদ্মাতীরে

শরীয়তপুরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তীরবর্তী এলাকাগুলোয় দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। এ আতঙ্ক নদী ভাঙনের। ভাঙনে একের পর এক বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি-ঘরবাড়ি, জমিসহ সবকিছু। এ অবস্থায় হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

শরীয়তপুর : জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামের পদ্মার ভাঙনকবলিতরা অসহায় জীবনযাপন করছে। ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ি সরানোর মতো লোক মিলছে না। কয়েক দিনের ভাঙনে বাড়িঘর, মসজিদ, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেওয়া জাজিরার কুণ্ডেরচরের শত শত মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর এলাকার আশপাশের গ্রামে ব্যাপক ভাঙন চলতে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এসব এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা কেবলই বেড়ে চলেছে। কয়েক দিনের ভাঙনে গ্রামটির ১২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, হঠাত্ পদ্মায় প্রবল স্রোত দেখা দেওয়ায় ব্যাপক ভাঙন ঘটছে। ১৩ আগস্টের ভাঙনে কলমিরচর বাজারটি বিলীন হওয়ায় ২৩০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। এখন ভাঙনমুখে রয়েছে আরও কয়েকটি বাজার। ভাঙনের শিকাররা গৃহহীন হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরছে। আতঙ্কিত অনেক পরিবার তাদের বসতঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। তবে কোনো যানবাহন না পেয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

পাবনা : আকস্মিক বন্যায় চরম বিপাকে পড়েছে পাবনার তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তলিয়ে গেছে লক্ষাধিক একর জমির রবিশস্য ও মৌসুমি সবজি খেত। রাত জেগে বাঁধ তৈরি করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করেও রেহাই পাচ্ছে না কৃষক। একই সঙ্গে নদী ভাঙনে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাঁড়া ইউনিয়নের চার গ্রাম এবং সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষ। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধি না পেলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত মানুষের। ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার গতকাল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের লোকজনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে চরের দুই গ্রামের সব বাড়িই ডুবে গেছে।

অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তারা গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম অসুবিধায় রয়েছেন। এদিকে পদ্মার পানিতে জেলার পদ্মাপাড়ের ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাদাপুর, পাবনা সদরের ভাড়ারা ও দোগাছি ইউনিয়নের লক্ষাধিক একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন সবজি খেত তলিয়ে গেছে। কৃষক আজম বিশ্বাস জানান, ‘আকস্মিক বন্যায় আমাদের গ্রামের ৫০-৬০ বিঘা জমির মুলা, ফুলকপি, গাজর, ধান, আখ, বরইসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আমরা রাত জেগে বাঁধ দিয়ে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিদিনই আরও বেশি এলাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে।’ এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপক বিভাগের উপপরিচালক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার কোনো আশঙ্কা আমরা দেখছি না। অচিরেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি কমলেও বেড়েছে মহানন্দার পানি। ফলে পদ্মা-তীরবর্তী নিমজ্জিত নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনতি ঘটেছে মহানন্দা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে। মহানন্দার পানি সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের কিছু অংশসহ প্রায় ৫০ বিঘা আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমলেও মহানন্দার পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শিবগঞ্জ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড আংশিক জলমগ্ন হয়েছে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এদিকে শিবগঞ্জ পৌর মেয়র কারিবুল হক রাজিন জানান, মহানন্দায় পানি বৃদ্ধির কারণে পৌর এলাকার মরদানা, দেবীনগর ও পিঠালীতলার সাতটি গ্রাম ও ৫০ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর