শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নৈশভোজেও হিলারি ট্রাম্প বাক্যবাণ

প্রতিদিন ডেস্ক

নৈশভোজেও হিলারি ট্রাম্প বাক্যবাণ

ঐতিহ্য ভেঙে একটি দাতব্য নৈশভোজেও পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘আল স্মিথ ডিনার’ নামে পরিচিত এ নৈশভোজের ঐতিহ্য হলো এতে প্রার্থীরা পরস্পরের প্রতি রসিকতা করে পরিবেশকে আনন্দময় করে তোলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানেও শেষ প্রেসিডেন্টশিয়াল বিতর্কের উত্তাপ বজায় থাকল। বিতর্কের মতো এখানেও পরাজয় ঘটেছে ট্রাম্পের। ব্যক্তিগত আক্রমণে কঠোর ভাষা প্রয়োগের কারণে উপস্থিত দর্শকদের নিন্দা কুড়াতে হয় তাকে।দরিদ্র শিশুদের সাহায্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতি বছর অক্টোবরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয় আলফ্রেড ই স্মিথ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ডিনার, যা ‘আল স্মিথ ডিনার’ হিসেবে পরিচিত। এ নৈশভোজ ক্যাথলিক চ্যারিটি ডিনার হিসেবেও পরিচিত। নিউইয়র্কের ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে থাকেন নিউইয়র্কের আচবিশপ কার্ডিনাল টিমোথি ডোলান। নৈশভোজটি ‘সাদা টাই উৎসব’ হিসেবেও পরিচিত।

ট্রাম্প ফের বললেন, শুধু জিতলেই ফল মানব : একদিন আগেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনে তিনি হেরে গেলে তা মানবেন কি না তা পরে জানাবেন। সেই মন্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে শুরু হয় কানাঘুষা, মার্কিন ইতিহাসে কী তাহলে এবার সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে। বলা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা। দেশটির নির্বাচনের আর বাকি ১৭ দিন। কিন্তু মনগড়া ও বাহুল্য কথাবার্তার ফুলঝুরি থামাচ্ছেন না ট্রাম্প। গত পরশু তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনের ফলাফলে যদি তিনি জয়ী হন! তিনি আরও বলেছেন, একটি ‘স্বচ্ছ’ ফল গ্রহণ করবেন তিনি। তবে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ফল চ্যালেঞ্জ করার অধিকার তার রয়েছে। ভোট লড়াইয়ের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তৃতীয় ও শেষ বিতর্কে হারার পর বৃহস্পতিবার ওহিওর ডেলাওয়ারে এক সমাবেশে ট্রাম্প একথা বলেন। সমাবেশে হাসতে হাসতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার সব ভোটার ও সমর্থক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের কাছে আমি অঙ্গীকার করছি, এই মহান ও ঐতিহাসিক ভোটের ফল আমি পুরোপুরি মেনে নেব ‘যদি আমি জয়ী হই’।’ এদিকে বিভিন্ন জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারির এগিয়ে থাকার তথ্য আসছে। তবে আগামী ৮ নভেম্বরের ভোটেই নির্ধারিত হবে—কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন নারী। বৃহস্পতিবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কারেনা ভার্জিনিয়া নামে আরেকজন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেছেন, ১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেনে তার শরীরে হাত দেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ওপর রাগ ঝাড়লেন ওবামা ও মিশেল : হেরে গেলে নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়ার আভাস দেওয়ায় ট্রাম্পকে তুলাধোনা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার মিয়ামিতে নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবামা। ওহাইও অঙ্গরাজ্যে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, জিতে গেলে ঐতিহাসিক এই নির্বাচনের ফল তিনি মেনে নেবেন। কিন্তু ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হলে তিনি আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেন। এই মন্তব্যের পর ওবামা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে গণতন্ত্রকে হেয় করা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বড়  দেশে নির্বাচনে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও ট্রাম্পের ভোট কারচুপির ফাঁদে পা না দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ামির ওই সমাবেশে মিশেল বলেন, ট্রাম্প ভোটারদের হতাশ করার চেষ্টা করছেন। এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাদের ভোট কোনো কাজে লাগবে না। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে ভোটারদের।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমে হিলারি : আমেরিকার বাইরের গণমাধ্যমে নিরঙ্কুশ আধিপত্য হিলারি ক্লিনটনের। বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বলছে, তৃতীয় ও সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিতর্কে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের ছিটেফোঁটা পাওয়াও বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের পাতানো নির্বাচনের দাবি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনেক পত্রিকা। ফ্রান্সের প্রখ্যাত ল্য পয়েন্ট ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল : ‘জিততে না পারলেও পরাজয় মানতে অস্বীকার করতে পারেন ট্রাম্প’। স্পেনের এল মঁদে পত্রিকা বলছে, বিতর্কের সময় ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক মনোভাব ‘আরও একবার হিলারিকে বাই ডিফল্ট জিতিয়ে দিয়েছে’। ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ানে লেখক জন ফুট মন্তব্য করেছেন, আমরা আগেও এক ট্রাম্পকে দেখেছি। তিনি হলেন সিলভিও বার্লুসকোনি। পত্রিকাটির আরও দুজন কলামিস্ট জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ট্রাম্পের অবস্থান ও হিলারিকে তার ‘কদর্য মহিলা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমেও দেখা গেছে একই চিত্র। অনেক পত্রিকা মনে করছে হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে স্পষ্টতই এগিয়ে আছেন। রাশিয়ান ব্যবসা সংক্রান্ত চ্যানেল আরবিসি টিভি বলছে, আবারও বিতর্কে জিতলেন হিলারি। একই মত দিয়েছে দেশটির সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট গেজেটা ডট আরইউ। চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলছে, দুই প্রার্থীর এই চূড়ান্ত মোকাবিলা দেখে মনে হয়েছে, ‘এটি বিতর্ক নয়, বরং মল্লযুদ্ধ।’—এএফপি, বিবিসি

সর্বশেষ খবর