কে বলবে তিনি চোখে দেখেন না। পথ চলেন একা একা, ঘর থেকে বের হয়ে বাজারসহ বিভিন্ন কাজ পর্যন্ত করেন, পথে পরিচিত কেউ কথা বললে চিনেও ফেলেন। কিন্তু ফারুক আহম্মেদের আসল সাফল্য তার পেশায়। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বড় বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ফারুক আহম্মেদের বাসা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লী বালিয়া এলাকায়। ৩৫ বছর বয়সী মানুষটি সব প্রতিবন্ধকতা জয়ের জীবন্ত এক উদাহরণ। সদর উপজেলা ভুল্লী বালিয়া এলাকায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ফারুক আহম্মেদ। স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করলেও নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় (১৯৯৬ সালে) তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে পড়েন। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর পরিবারের উৎকণ্ঠা ও হতাশার মাঝেই শুরু হয় ফারুকের পথচলা। ৫ বছর পর ২০০১ সালে তিনি জানতে পারেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলেও পড়াশোনা করা যায়। এরপর জীবনটা নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়া ব্যয়বহুল হলেও ফারুক দিনাজপুর জুবলী স্কুল রিসোর্স সেন্টারে মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০০৩ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন ফারুক। এরপর ফারুক বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। এরপর ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। চোখের আলো হারিয়ে যাওয়ায় প্রথাগত বৈষয়িক সাফল্য যার অধরা থেকে গেল সেই ফারুক কিন্তু থেমে যাননি। জ্ঞানের আলো ছড়ানোকে করে নিলেন জীবনের ব্রত। সরেজমিন একদিন : জেলা শহর থেকে ১৫ কি. মি দূরে বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। পাশেই বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সব শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে দৃষ্টিশক্তিহীন ফারুকের কথা শুনছেন। শিক্ষক ফারুক এমনভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছেন যেন স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাদান করছেন। ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী আম্বিয়া জানায়, ফারুক স্যার সবার প্রিয়। ওনার কারণে আমরা নিয়মিত স্কুলে আসি। দ্বিতীয় শ্রেণির শামীম বলে, স্যার চোখে দেখতে পারেন না। কিন্তু এত সুন্দর করে আমাদের বোঝান কেউ না দেখলে বুঝতেই পারবে না। বালিয়ার মিজানুর রহমান জানান, ইচ্ছে থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ফারুক। ফারুকের ইচ্ছে তিনি বিসিএস ক্যাডার হবেন যেন সেই ইচ্ছে তার পূরণ হয়। দৃষ্টিশক্তিহীন শিক্ষক ফারুক জানান, ইচ্ছে থাকলে সব কিছু করা সম্ভব তা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা আমার সন্তান। তাদের সুনাগরিক করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ৩৫তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় ভালোই করেছিলাম। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আমি একজন দৃষ্টপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বিসিএসের সব ধাপ পার করেও ভাইভা বোর্ড থেকে এভাবে বিমুখ হয়ে গেলাম। আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম বলে কষ্টের কথা জানালেন ফারুক। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবার অংশগ্রহণ করব। হয়তো আমার জীবনের পথ চলা কিছুটা হলেও থমকে গেল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জীবন নেছা জানান, শিক্ষক ফারুকের ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি অবাক করার মতো। তার কারণেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৮০ ভাগ। দৃষ্টিশক্তিহীন হলেও তার ইচ্ছেশক্তি প্রখর।
শিরোনাম
- বগুড়ায় সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করবে সাইক ও বিপিসি
- জ্বালানি ও জনবল সংকটে বন্ধ কুতুবদিয়ার ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স
- নভেম্বরের মধ্যেই সব নতুন বই পেয়ে যাবো: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
- নাসার তৈরি সুপারসনিক বিমানের সফল উড্ডয়ন
- মেট্রোরেল চলাচল শুরু
- সরকারের মধ্যে সব সময় একটা ‘শেকি’ ব্যাপার দেখা যায় : সারোয়ার তুষার
- মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ ঢাকার
- প্রথমবার মার্কিন রাজধানী সফরে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট
- তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় দিয়েই রাজনৈতিক সংকটের শুরু : আপিল বিভাগকে বিএনপি
- জেনেভা ক্যাম্পে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ পরিদর্শন
- কাতারের নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সংহতি পুনর্ব্যক্ত বাংলাদেশের
- এবারের ইজতেমা জাতীয় নির্বাচনের পর: ধর্ম উপদেষ্টা
- গোল্ডেন ভিসাধারীদের জন্য নতুন চার সুবিধা ঘোষণা আমিরাতের
- বিএনপি নেতার অর্থায়নে কাঠের সেতু, ৬ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব
- সিইসির সঙ্গে এনসিপির বৈঠক বিকালে
- এই মুহূর্তে ট্রাম্প-পুতিনের জরুরি বৈঠকের প্রয়োজন নেই: ক্রেমলিন
- নীল রঙের কুকুর! বিজ্ঞানীরাও হতবাক
- শাহরুখের জন্মদিনে প্রকাশ পেল ‘কিং’ টিজার, ফিরল বলিউডের আসল বাদশা
- হানিফসহ চারজনের বিচার শুরু, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
- কানাডায় এইম ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন