রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাতটি আন্তর্জাতিক স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অব্যাহত লোকসান কমাতে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। আগামী মঙ্গলবারের পর্ষদ সভায় যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, কানাডার টরন্টো, ইতালির রোম, হংকং, বাহরাইন ও দিল্লির অফলাইন স্টেশনও বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ছয়টি রুটসহ নিউইয়র্ক রুট বন্ধের সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত সাব-কমিটি। এর আগে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০০৬ সালের ২৯ জুলাই। এরপর আর চালু করা যায়নি রুটটি। আবার চালু করার আশায় ১০ বছর ধরে নিউইয়র্কের অফিস খরচ ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে আসছে বিমান।
এ অবস্থায় লোকসান কমাতে কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নিউইয়র্কের স্টেশনটিই বন্ধের পরিকল্পনা করছে বিমান। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, বিমানের আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলো নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, বিমানের নিউইয়র্ক স্টেশনে বর্তমানে স্থায়ী কর্মকর্তা আছেন দুজন। স্টেশনটি বন্ধ করা হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। যদিও রুটটি চালু করতে গত কয়েক বছর জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব উড়োজাহাজে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব না হওয়ায় অন্য এয়ারলাইনস থেকে ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইন্স্যুরেন্স (সিএমআই) অংশীদার নিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বিমান। ফলে স্টেশনটিই বন্ধ করে দিচ্ছে সংস্থাটি। ১৯৯৩ সালে আমস্টারডাম হয়ে নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট শুরু করে বিমান। পরবর্তী সময়ে ঢাকা-দুবাই-ব্রাসেলস-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে সংস্থাটি। ডিসি-১০ উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক রুটটি পরিচালনা করত বিমান। তবে লোকসান ও উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারণে ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ নিউইয়র্ক রুটে সাপ্তাহিক ফ্লাইট তিন থেকে একটিতে নামিয়ে আনা হয়। একই সময় ব্রাসেলস রুটের ফ্লাইটও বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২৯ জুলাই নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় বিমান। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে পুনরায় ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট চালু করে সংস্থাটি। সে সময় বহরে নতুন যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর (পালকি) দিয়ে রুটটি চালু করা হয়। তবে হজ ফ্লাইট চালাতে গিয়ে উড়োজাহাজ সংকটে ওই বছর ১৯ অক্টোবর আবারও বন্ধ হয়ে যায় ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট। বর্তমানে বিমানের ম্যানচেস্টার স্টেশনে পাঁচজন কর্মকর্তা রয়েছেন। দীর্ঘদিন ফ্লাইট না থাকায় স্টেশনটি বন্ধ করে সব কর্মকর্তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ১৯৮১ সালে ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট শুরু করে বিমান। তখন এ রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট চলাচল করত। ১০ বছর পর ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে একটি করা হয়। পরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে রোমের সঙ্গে ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট যুক্ত করে ফ্লাইট শুরু হয়। ঢাকা-রোম-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে ফ্লাইটপ্রতি গড়ে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা লোকসান হতে থাকায় বন্ধ করা হয় রুটটি। পরে লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা-রোম রুট। দীর্ঘদিন ফ্লাইট না থাকায় রোম স্টেশনটিও বন্ধ করা হচ্ছে। কার্যক্রম না থাকায় বন্ধ করা হচ্ছে টরন্টো ও বাহরাইন স্টেশনও। যদিও এসব স্টেশনে বর্তমানে বিমানের নিজস্ব জনবল নেই। এদিকে ১৯৯২ সাল থেকে ঢাকা-দিল্লি ও ১৯৯৩ সাল থেকে ঢাকা-হংকং রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে এলেও হজ ফ্লাইট নির্বিঘ্ন করতে ২০১৪ সাল থেকে এ দুই রুটে ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। যদিও দিল্লি ও হংকংয়ে বিমানের অফিস, লোকবল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি এখনো রয়েছে। তবে বর্তমানে দিল্লি স্টেশন বন্ধের পরিকল্পনা থাকলেও সেখানকার চার কর্মকর্তার মধ্যে একজনকে রেখে তিনজনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আর হংকংয়ের স্টেশন বন্ধ করা হলেও সেখানে থাকা একজন কর্মকর্তাকে আপাতত ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না।
বিমানের আয় কমেছে ৪৮ কোটি টাকা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আয় গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৮ কোটি টাকা কমেছে। যদিও এই অর্থবছরে বিমানের যাত্রী পরিবহন বেড়েছে। বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়েছে, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিমান লাভ করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান ৩২৪ কোটি টাকা লাভ করে। গত অর্থবছর লাভ ৪৮ কোটি টাকা কমে ২৭৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালে বিমান কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পরপর দুবার লাভের মুখ দেখে। এরপর আবার লোকসানে পড়ে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি। টানা পাঁচ বছর লোকসানে থাকার পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান লাভের মুখ দেখে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লাভে থাকলেও এর পরিমাণ কমে আসে। পরপর দুই অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিমান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৩১০ কোটি টাকা রাজস্ব কর দিয়েছে।
২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিমান যাত্রী বহন করেছে ২৩ লাখ ১৮ হাজার জন, এর আগের বছর যা ছিল ২০ লাখ ২০ হাজার। আয় কমার কারণ হিসেবে বিমান বলছে, ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্য সরকার কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে কার্গো পরিবহন তুলনামূলক কিছুটা কম হয়েছে। ফলে আয়ও কমেছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে অ্যাভিয়েশন জেট ফুয়েলের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় খরচ বেশি হয়েছে। তবে সংস্থাটি বলছে, এত কিছুর পর বিমানের এই মুনাফা অর্জন নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার নিজস্ব ফ্লাইট ছাড়াও ২৬টি বৈদেশিক এয়ারলাইনসের ১৮ হাজার ৬২৮টি ফ্লাইট হ্যান্ডলিং করেছে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        