শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

গাছে বেঁধে নির্যাতন

প্রতিদিন ডেস্ক

গাছে বেঁধে নির্যাতন

এবার রাজশাহীর দুর্গাপুরে দুই স্কুলছাত্র এবং নোয়াখালীর হাতিয়ায় আরেক স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। রাজশাহীতে চুরির অভিযোগ তুলে এবং নোয়াখালীতে চাঁদার দাবিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। রাজশাহীর ঘটনায় দুই ইউপি সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, দুর্গাপুরে ছাগল চুরির অভিযোগে দুই স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে তারা ওই দুই স্কুলছাত্রের পরিবারের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। গত বুধবার দুপুরে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের আন্দুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার দুই স্কুলছাত্র হলো— উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জার্জিস হোসেন ও পলাশবাড়ী গ্রামের সেকু আলীর ছেলে রতন। তারা দুজন উপজেলার আমগাছী সাহার বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টায় ছাগল চুরির অভিযোগে জার্জিস ও রতনকে আন্দুয়া গ্রামে ধরে নিয়ে যান ঝালুকা ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মোতালেব। পরে ওই গ্রামের রেজাউলের বাড়ির সামনে মোতালেব ওই দুই স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে মারধর করেন। এরপর দুপুরে সেখানে শালিস বৈঠক বসানো হয়। শালিস বৈঠকে দুই ছাত্রের পরিবারের কাছ থেকে আট হাজার করে ১৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়। শালিস বৈঠকে ইউপি সদস্য আবদুল মোতালেব ছাড়াও ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডল ও আরেক ইউপি সদস্য মির্জা আবদুল লতিফ উপস্থিত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডল অবশ্য দুই স্কুলছাত্রকে নির্যাতন বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ইউপি সদস্য আবদুল মোতালেব জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে জার্জিস ও রতন আন্দুয়া গ্রামের রেজাউলের বাড়ি থেকে ছাগল চুরি করে নিয়ে যায়। বুধবার ভোরে রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার হরিয়ান বাজার দিয়ে ছাগলটি নিয়ে যাওয়ার সময় এক নাইটগার্ড সন্দেহ করে ছাগলসহ তাদের আটক করে রাখে। পরে খবর পেয়ে ছাগলসহ তিনি নিজে গিয়ে দুজনকে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, প্রথমে তারা চুরির কথা অস্বীকার করে। পরে চড়-থাপ্পড় দেওয়ার পর স্বীকার করে। চুরির কথা স্বীকার করায় শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের পরিবারের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এর মধ্যে ছাগলের মালিক রেজাউলকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকিটা দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে খরচ হয়েছে বলে জানান মোতালেব। নির্যাতনের শিকার জার্জিসের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অল্পবয়সী দুই কিশোর ভুল করতে পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো কোন আইনে আছে আমাদের জানা নেই। এ ছাড়া হারানো ছাগল মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আইনের আশ্র্রয় নেব।’ এদিকে গতকাল এ ঘটনায় জড়িত ঝালুকা ইউনিয়নের সদস্য আবদুল মোতালেব ও আবদুল লতিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া জানান, নির্যাতিত শিশু জার্জিসের বাবা জিয়াউর রহমান এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে ওই দুই ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে তত্পরতা শুরু করেছে পুলিশ।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গ্রামপুলিশের নেতৃত্বে এক স্কুলছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনার চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতিত ছাত্রকে সাজানো ইভটিজিং মামলায় আসামি করে ভুয়া নামে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। জানা গেছে, হাতিয়া থানার মামলা নং- ০২, তারিখ ২/৩/১৭ইং এর আসামির নাম মো. রিয়াদ উদ্দিন (২০) পিতা- জসিম উদ্দিন ডুবাই হলেও ওই মামলায় স্কুলছাত্র আবদুল আলীম রিদয় (১৬) পিতা- আবদুল হাদীকে পুলিশ কোর্টে পাঠায়। অভিযোগে প্রকাশ, হাতিয়া উপজেলার ৯নং বুড়ির চর ইউনিয়নের রেহানিয়া গ্রামের প্রবাসী আবদুল হাদীর শিশু পুত্র আবদুল আলীম রিদয় (১৬) স্থানীয় রেহানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। গত ১ মার্চ সন্ধ্যার পর ৪নং ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ মহিউদ্দিন রিদয়কে ‘ওই ওয়ার্ডের সাইফুল মেম্বার ডেকেছে’ বলে বাড়ি থেকে নিয়ে সাইফুল মেম্বারের বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। এরপর গ্রামপুলিশ মহিউদ্দিন, সাইফুল, রাশেদ, মাছুম, সেলিম, জিল্টুসহ রিদয়ের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা রিদয়কে দিয়ে মোবাইল ফোনে তার মা মিনারা বেগমের সঙ্গে কথা বলান এবং ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার বিষয়ে হাতিয়া থানার ওসিকে তাত্ক্ষণিক জানানোর পরও রাতে রিদয়কে উদ্ধারে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সারারাত নির্যাতন করেও সন্ত্রাসী চক্র চাঁদা না পেয়ে পরদিন সাজানো মিথ্যা মামলায় আসামি সাজিয়ে আবদুল আলীম রিদয়কে হাতিয়া কোর্টে প্রেরণ করে। রিদয় বর্তমানে নোয়াখালী জেলহাজতে রয়েছে। এদিকে রেহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, আবদুল আলীম পিতা-আবদুল হাদী ২০১১ সালে মধ্যহরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তার জন্মতারিখ ০১/০৭/২০০১ইং। জন্মনিবন্ধন সনদেও  আবদুল আলীমের জন্মতারিখ ০১/০৭/২০০১ইং পাওয়া যায়।  শিশু আবদুল আলীমকে নির্যাতন করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে সাজানো ইভটিজিং মামলায় আসামি করার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মনে করছে মানবাধিকার কমিশন। সূত্র বলছে, হাতিয়া থানার মামলা নং-০২, তারিখ- ২/৩/২০১৭ইং এর আসামি মো. রিয়াদ উদ্দিন (২০) পিতা- জসিম উদ্দিন রুবেল হয়, তাহলে উক্ত মামলায় শিশু আবদুল আলীম (১৬) পিতা- আবদুল হাদীকে আসামি দেখিয়ে কোর্টে সোপর্দ করার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আবদুল আলীম রিদয়ের মা মিনারা বেগম বলেন, ‘চৌকিদার মহিউদ্দিন আমার ছেলেকে সাইফুল মেম্বারের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। তারা রিদয়কে সারারাত নির্যাতন করেছে। আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। আমি টাকা না দেওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে রিদয়কে পুলিশে দেয়। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’ প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর