ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা। গত বছরের ২৬ অক্টোবর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসেন এক তরুণী। পরনে লাল রঙের ছাপ-ছাপ থ্রি-পিস। তরুণীর সঙ্গে ছিল একটা ছেলে। ছেলেটাকে প্রথমে ইমার্জেন্সি গেটের একজন পুলিশ আটক করে ডিউটিরত আনসার সদস্যের হাতে দেয়। পরে মেয়েটাকে হাসপাতালের বারান্দায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যসহ অন্যরা। সম্প্রতি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এভাবেই গণধর্ষণের ঘটনার কথা স্বীকার করেন আনসার সদস্য আতিকুল ইসলাম। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান এ আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সূত্র জানায়, আসামি আতিকুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিচারকের কাছে বলেছেন, আমি ঢাকা মেডিকেলের আনসার ক্যাম্পে গত দেড় বছর ধরে কর্তব্যরত আছি। গত বছরের ২৬ অক্টোবর মেডিকেলের আউট ডোর এলাকায় আমার টহল ডিউটি ছিল রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। ডিউটি কমান্ডার ছিলেন এপিসি একরামুল। আমার ডিউটি ছিল আনসার সদস্য বাবুলের সঙ্গে। আনসার সদস্য মিনহাজের ডিউটি ছিল ইমার্জেন্সির গেটে। মিনহাজ তার নামে ইস্যু করা শটগানটা ইমার্জেন্সি গেটের পাশের ওটি রুমে ডিউটিতে থাকা আনসার সদস্য রাশেদের কাছে রেখেছিল। আনসার সদস্য সিরাজ নাক, কান, গলা বিভাগের ডিউটিতে ছিল। আমি অস্ত্রসহ সরকারি পোশাকে ডিউটি করছিলাম। রাত ১২টায় একটা মেয়ে মেডিকেলের নতুন ভবনের সামনে আসে। মেয়েটার বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ বছর। মেয়েটার হাতে ফুলের তোড়া ছিল। মেয়েটার পরনে লাল রঙের ছাপ-ছাপ থ্রি-পিস। মেয়েটার সঙ্গে ছিল একটা ছেলে। ছেলেটার বয়স প্রায় ২৫ বছর। ছেলেটাকে প্রথমে ইমার্জেন্সি গেটের একজন পুলিশ আটকে ইমার্জেন্সি গেটে ডিউটি করা আনসার সদস্য মিনহাজের হাতে দেয় এবং বলে যে, মেয়েটার সঙ্গে ছেলেটার পরিচয় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে হোটেলে তিন দিন রাখে। এ জন্য মেয়েটা ছেলেটাকে গালিগালাজ করে। মেয়েটা তখন বলে যে, তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। মেয়েটা চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে এসেছে। তখন বাবুল মেয়েটাকে টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। সেখানে আমিও ছিলাম। পরে মেয়েটাকে নিয়ে মিনহাজ আউটডোরের থেরাপির বাইরের পশ্চিম পাশের বারান্দার কোনায় নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি ও বাবুল বিষয়টি দেখে ফেলি। বাবুল ওদের কিছু বলেনি। আমি নিষেধ করেছি। তখন এপিসি একরামুল এসে বলে যে, সে পারমিশন দিয়েছে এবং আমাকে চুপ থাকতে বলে। তখন আমি চুপ হয়ে যাই। এর মধ্যে মিনহাজের শেষ হয়, পরে বাবুল মেয়েটাকে থেরাপির রুমে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপরে থেরাপি রুমে গিয়ে আমিনুল ওই কাজ শেষ করে। তখন আউট ডোরের একজন স্টাফ এবং অ্যাম্বুলেন্সের একজন ড্রাইভার আসে যাদের নাম আমি জানি না কিন্তু দেখলে চিনতে পারব। তখন এপিসি একরামুল তাদের বলে যে, আপনারা কিছু বলিয়েন না। পরে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারও ওই মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। ড্রাইভার টাকা দিতে চাইলে মেয়েটা টাকা নেয়নি। পরে সিরাজও একইভাবে মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরই মধ্যে ভোর ৬টা বেজে গেলে আমি হাতিয়ার জমা দিয়ে ক্যাম্পে ঘুমিয়ে যাই। সকাল ১০টার দিকে আমি খবর পাই যে, ক্যাম্প কমান্ডার জজ আমাদের ডাকছে। গিয়ে দেখি ওই মেয়েটা ক্যাম্প কমান্ডারের অফিস রুমের ভিতরে। ক্যাম্প কমান্ডার মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করে কে কে তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তখন মেয়েটা হাত দিয়ে তাদেরকে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু আমাকে দেখায়নি এবং আমার কথাও বলেনি। পরে আমি কমান্ডারকে সব খুলে বলি। তখন আমি বলেছিলাম যে, আমি ডিউটি কমান্ডার এপিসি একরামুলকে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু সে আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। তখন ক্যাম্প কমান্ডার জজ এবং পিসি জাহিদ ঘটনার বিষয়ে বিচার করে। পরে ক্যাম্প কমান্ডার জজ ওই মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসতে বলে এবং এপিসি একরামুল গাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। মেয়েটা আবার বিকাল ৫টার সময় ঢাকা মেডিকেলে এসে টিকিট কেটে নতুন ভবনে আট তলায় ভর্তি হয়। পরে যে সব আনসার সদস্য ধর্ষণ করেছে তারা সবাই পালিয়ে যায়। আমাকেও পালাতে বলে। আমি পালাইনি। পিসি জজ, কমান্ডার জাহিদ এবং আনসার থানা অফিসার দুলাল পলাতকদের চাকরি থেকে রিজাইন দেওয়ার জন্য বললে তারা রিজাইন দিয়ে চলে যায়। আমি রিজাইন দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণধর্ষণের অভিযোগে গত বছরের ২ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে ওই তরুণী। হাসপাতালের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসারের ছয় সদস্য এই ধর্ষণে জড়িত বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। আসামিরা হলেন— এপিসি একরামুল, আনসার সদস্য আনিসুল, আতিকুল, সিরাজ, বাবুল ও মিনহাজ। এদের মধ্যে আতিকুল ও একরামুল কারাগারে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
শিরোনাম
- যে কারণে গভীর পর্যবেক্ষণে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, রয়টার্সের বিশ্লেষণ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, তৈরি হচ্ছে মঞ্চ
- রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলেছে ভারত, প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি
- সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা: শত শত মানুষকে সরিয়ে নিলো ভারত
- খায়রুজ্জামান লিটনের সাবেক এপিএস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টিটু আটক
- উত্তেজনা চরমে: পাকিস্তানের পক্ষে বার্তা দিলেন এরদোগান
- ‘সিনেমা’ থেকে ‘বাস্তব’ জগতে ফিরে আসুন, ভারতকে পাকিস্তানের আহ্বান
- ইংলিশ দলে ডাক পেলেন রিউ
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের কোনও বিষয় নয়’ : যুক্তরাষ্ট্র
- এল-ক্লাসিকোর রেফারি চূড়ান্ত
- পাকিস্তান থেকে সরিয়ে যেখানে হবে পিএসএল
- সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেফতার
- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা : নাহিদ
- পাকিস্তানি পাইলটকে আটকের দাবি ভারতের, প্রমাণ চাইল ইসলামাবাদ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
- প্রথম আমেরিকান পোপ রবার্ট প্রেভোস্ট
- বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খাত হুমকিতে
- 'পাকিস্তান আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে সারা পৃথিবী জানবে'
- ভারতের সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের
প্রত্যক্ষদর্শী আনসারের স্বীকারোক্তি
ঢাকা মেডিকেলে গণধর্ষণ
তুহিন হাওলাদার
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
১৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার দাবি ভারতের
১৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম