রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

কিশোরগঞ্জে কেঁচো সার

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে কেঁচো সার

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজকর্ম সেরে বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সালমা আক্তার। গ্রামে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন কেঁচো সার। এটাই এখন তার আয় রোজগারের প্রধান মাধ্যম।

সালমার স্বামী আতাবুর রহমান স্ত্রীকে এ কাজে সার্বক্ষণিক সাহায্য করে থাকেন। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আঙ্গিয়াদী গ্রামের কিষাণি সালমাকে এখন এক নামে সবাই চিনেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রায় এক বছর আগে সালমা তার নিজ বাড়িতে কেঁচো সার তৈরি শুরু করেন। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ এর আওতায় কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপের (সিআইজি) সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন প্রদর্শনী পান সালমা আক্তার। প্রায় এক বছর আগে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন তিনি।

এ প্রকল্পের আওতায় প্রথমে তাকে ছয়টি চাক, ছয়টি স্ল্যাব, ঘর তৈরির জন্য ছয়টি টিন ও কিছু কেঁচো দেওয়া হয়। বর্তমানে তার রয়েছে ২৩টি চাক। কেঁচো সার তৈরির উপকরণও কৃষকের হাতের কাছেই রয়েছে। চাক বা রিংয়ের মধ্যে অল্প মাটি ও গোবর মিশিয়ে কেঁচোর বিছানা তৈরি করা হয়। চাকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ গোবরের স্তর দিতে হবে। এছাড়া তিন ইঞ্চি পরিমাণ অর্ধপচা কলাগাছের টুকরার স্তর এবং তিন ইঞ্চি পরিমাণ কচুরিপানার অর্ধপচা স্তর দিয়ে হয়। এভাবে চাকটি ভরাট করে কেঁচো দিতে হবে। ৩০/৪০ দিন রাখলেই তৈরি হবে কেঁচো সার। একটি চাকে এক কেজি কেঁচো লাগবে। ৩০ বা ৪০ দিন পর এ কেঁচো চারগুণ বৃদ্ধি পায়। আর প্রতি চাকে দেড় মণ সার পাওয়া যায়। এভাবে প্রতিমণ সার তৈরিতে খরচ পড়ে মাত্র ১০০ টাকা। প্রতিমণ সার বিক্রি হয় ৮০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি কেঁচো বিক্রি হয় ১ হাজার টাকায়। সালমা জানান, তার স্বামী একজন বর্গাচাষী। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। কেঁচো সার বিক্রি করেই মূলত ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচ চালানো হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কৃষকরা তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে দিলে সালমা তাদের বাড়িতে গিয়ে কেঁচো সার পৌঁছে দেন। অনেকেই আবার সালমার বাড়িতে এসেও কিনে নিয়ে যান। যারা নিজেরা কেঁচো সার তৈরি করতে চান সালমা তাদের কেঁচো সরবরাহ করেন। তিনি জানান, আঙ্গিয়াদী গ্রামের অনেক কৃষক ও কিষাণিকে তিনি নিজে কেঁচো সার তৈরির পদ্ধতি শিখিয়েছেন। গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবারের মধ্যে ১০০ পরিবারেই এখন কেঁচো সার তৈরি করে। আঙ্গিয়াদী ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক সোহাগ এক্ষেত্রে কৃষকদেরকে সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, পাকুন্দিয়ায় কেঁচো সার উৎপাদনে একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। তার ব্লকে শুধু আঙ্গিয়াদী গ্রামেই নয়, পার্শ্ববর্তী খামা গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে কেঁচো সার তৈরি করা হচ্ছে। খামা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন কেঁচো সার উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় গত বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকে ভূষিত হয়েছেন। এখানকার উৎপাদিত কেঁচো সার পাকুন্দিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। কেঁচো সার উৎপাদনের ফলে এখানকার জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা অনেকাংশে কমে আসছে বলেও তিনি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর