বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ক্যাশ-ইন চক্র

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর ক্যাশ-ইন চক্র

রাজধানীর উত্তরার একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিসে দুজন লোক যান ডলার কিনতে। তারা মানি এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে জানান, তারা অনেক ডলার কিনবেন। এত টাকা তাদের ক্যাশ দেওয়া সম্ভব নয়। তারা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে চান। তখন তারা ডলারের বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার জন্য মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চান। মানি এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তাদের কথায় রাজি হয় এবং অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেন। একটু পরই মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্যাশ-ইনের মেসেজ আসে। পরে মানি এক্সচেঞ্জের কর্মী দ্রুত ব্যাংকে চলে যান। ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার কর্মকর্তাও ক্যাশ-ইনের বার্তা পেয়ে মানি এক্সচেঞ্জের কর্মীকে জানান, ক্যাশ পোস্টিং হচ্ছে, আপনি একটু বসুন। মানি এক্সচেঞ্জে বসে থাকা ডলার ক্রেতা এ সময় মানি এক্সচেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তাকে টাকা আসছে কিনা তাগাদা দেন। তখন মানি এক্সচেঞ্জের ক্যাশিয়ার ফোন করেন ব্যাংকে পাঠানো তাদের কর্মকর্তাকে। ওই কর্মকর্তা তখন তাকে জানান, টাকা পোস্টিং হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গেও এ সময় মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ফোনে কথা বলেন ক্যাশিয়ার। ফোনে ব্যাংক কর্মকর্তা ক্যাশিয়ারকে টাকা পোস্টিং হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেন। তার কথা শুনে মানি এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ওই দুই লোককে ডলার দিয়ে দেন। তারা ডলার নিয়ে চলে যান। ব্যাংক থেকে মানি এক্সচেঞ্জের কর্মী নিজের অফিসে চলে আসেন। পরে মানি এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলে জানতে পারেন পোস্টিং সিগন্যাল দিলেও টাকা আসেনি। মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষও হতবাক। এ কী করে সম্ভব! পরে মানি এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন, ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বিপুল অঙ্কের টাকা খুইয়েছেন তারা। ডলার ক্রেতারা প্রকৃত অর্থেই ছিল প্রতারক।

ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছে ক্যাশ-ইন বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। চক্রটি গ্রাহকের কাছে শুধু এসএমএস পাঠিয়েই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করে।

ঢাকার একটি ব্যাংকের উত্তরা শাখার গ্রাহক এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণার শিকার হয়ে পৌনে ৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন। ইয়াসিন শিকদারের (২৩) মোবাইলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশ-ইন হওয়ার এসএমএস আসে। ওইদিনই গ্রাহক চেক নিয়ে টাকা তুলতে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ সময় অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পান, ঈশ্বরদী শাখা থেকে তার অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হওয়ার একটি পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। তখন ব্যাংক থেকে ইয়াসিন শিকদারকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। পরে ব্যাংকের উত্তরা শাখা থেকে ঈশ্বরদী শাখায় টাকা পোস্টিংয়ে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ঈশ্বরদী শাখার ম্যানেজার জানান, ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান পরিচয় দিয়ে ঢাকা থেকে একজন তাকে ফোন করে ব্যাংকের সার্ভারে সমস্যার কথা জানান। পরে সার্ভার ঠিক করে তা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা পরীক্ষার জন্য ম্যানেজারকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন। এই নম্বরে পোস্টিংয়ের একটি বার্তা পাঠিয়ে চেক করতে বলেন। ম্যানেজার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের উত্তরা শাখার গ্রাহক ইয়াসিনের অ্যাকাউন্টে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা পোস্টিং দেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের মোবাইলে ক্যাশ-ইন বার্তা চলে যায়। এদিকে ইয়াসিন টাকা দিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তাগাদা দিতে শুরু করেন। ঈশ্বরদী শাখায় কথা বলার পর ব্যাংকটির উত্তরা শাখার কর্মকর্তারা গ্রাহককে জানিয়ে দেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারক চক্র আইটি প্রধান পরিচয়ে ঈশ্বরদী শাখার ম্যানেজারকে ফোন করে সার্ভার সমস্যার কথা জানান। ত্রুটি ঠিক করেই তাকে আবারও জানানো হবে বলে জানিয়ে ফোন রেখে দেন। একটু পর আবার ফোন দিয়ে প্রতারক চক্র ইয়াসিন শিকদারের নম্বর দিয়ে চেক করতে বলেন। ম্যানেজার এটা আইটি প্রধানের নম্বর ভেবেই পোস্টিং দেন। কিন্তু এ পোস্টিং যায় ইয়াসিনের কাছে। ইয়াসিন ভেবেছেন টাকা পোস্টিং হচ্ছে। ঢাকার উত্তরা শাখাও ভেবেছে পোস্টিং হচ্ছে। কিন্তু এটা যে প্রতারকদের কাজ তা বুঝতে বুঝতে সব শেষ। প্রতারকরা ইয়াসিনের টাকা নিয়ে চম্পট। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, একটি প্রতারক চক্র এর সঙ্গে জড়িত। মূলত মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন বেশি। তবে টাকা পোস্টিং হচ্ছে এমন বার্তা পেয়েই লেনদেন করা ঠিক নয়। সবাইকে সতর্ক থেকেই লেনদেন করা উচিত। নয় তো ইয়াসিন শিকদারের মতোই প্রতারণার জালে আটকে যেতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর