রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ক্যাবের প্রতিবেদন

বিদায়ী বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ৬ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। তবে বিদায়ী বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আগের বছরের চেয়ে কম বেড়েছে।  ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কর্তৃপক্ষ রাজধানীর খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবার দাম বিশ্লেষণ করে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। ক্যাব গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত ব্যয় বাদ দিয়ে জীবনযাপনের ব্যয়সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ক্যাব জানায়, ২০১৮ সালে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য  স্থিতিশীল ছিল। এর মধ্যে মোটা চালের দাম ১৫ শতাংশ, ডালের দাম গড়ে ১৭ শতাংশ, তেলের দাম ২ শতাংশ, মসলার দাম ২২ শতাংশ, শাক-সবজির দাম প্রায় ১১ শতাংশ এবং চিনির দাম ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমেছে। ক্যাবের হিসাবে ২০১৮ সালে এর আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাবানের। এই পণ্যটির দাম বাড়ে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া চালের গড় মূল্য ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, মাছের দাম ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, শাক-সবজিতে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, পান-সুপারিতে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ আর তরল দুধে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব পণ্যের দাম কমেছে সেগুলো হলো- ডাল, লবণ, মসলা, চিনি।

ক্যাব চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ গ্রামে থাকলেও ক্যাবের সামর্থ্যরে অভাবে ব্যয়ের সার্বিক চিত্র তুলে আনা সম্ভব হয়নি। শহুরে এই হিসাব সার্বিক চিত্র সম্পর্কে একটি আংশিক ধারণা দেবে। ব্যয় বৃদ্ধির এই হার ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন রকম ফল বয়ে আনতে পারে। ব্যয় অনুপাতে একজন ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি না পেলে তো সেটা স্বস্তিদায়ক হবে না। আয় বৃদ্ধির ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। যদি ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় মানুষের আয় বৃদ্ধি হয় তাহলে সেটাই হবে স্বস্তিদায়ক।  ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিগত বছর আমদানি শুল্ক বাবদ এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে ভোক্তাদের। যা কিনা প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের তুলনায় বেশি। ভোক্তাদের ওপর থেকে এই শুল্কের হার কমাতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্যাব জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় রাখতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। যেমন : ধান-চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং কৃষককে উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য দিতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘কন্ট্রাক্ট গ্রোয়িং পদ্ধতি’ অনুসরণ করে ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি শস্য সংগ্রহ করা, শস্য বীমার প্রবর্তন করা।

 বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার এবং ‘প্রাইস স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখা। এলএনজি আমদানিতে সব প্রকার শুল্ক-কর মুক্ত রেখে গ্যাসের মূল্য সহনীয় রাখা। চিকিৎসকদের ফিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ, ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুলভে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। ওষুধনীতি বাস্তবায়ন করা। বিএসটিআই ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা। শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার লক্ষ্যে অবিলম্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করা। খেলাপি ঋণ ঠেকাতে সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে পর্ষদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা। আমদানি শুল্কের ব্যাপক হ্রাস এবং লবণসহ যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ অবিলম্বে সেসব পণ্যের অবাধ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে প্রণীত আইন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য অইন ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৫ এর বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যাতে সুষম বণ্টন হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা। আয় বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সর্বশেষ খবর