মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩

চলছে পদ্মার তীর দখলের উৎসব

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

চলছে পদ্মার তীর দখলের উৎসব

পদ্মার তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতঘরসহ নানা স্থাপনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীতে চলছে সরকারি জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। এ থেকে বাদ যায়নি পদ্মার পাড়ও। যে যার মতো করে দখলের জায়গায় রাতারাতি গড়ে তুলছেন পাকা বা আধাপাকা স্থাপনা। এর মধ্যে আছে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি। দখলদারের তালিকায় আছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী। কিন্তু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে দখলদাররা। নগরীর তালাইমারী থেকে শুরু করে বুলনপুর পর্যন্ত পদ্মার উত্তর তীরের বিভিন্ন স্থান দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। কোথাও কোথাও নদীর ভিতরের জায়গায়ও স্থাপনা বানানো হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে আছে বাড়িঘর, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়, ক্লাবঘর, ফাস্টফুড ও কফি হাউসের দোকান, গরুর খামার, পার্ক। কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীরা, কোথাও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, কোথাও খোদ সিটি করপোরেশন এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মাকে ঘিরে গড়ে ওঠা রাজশাহী শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে পদ্মার তীরবর্তী এলাকা বড়কুঠি থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত। বড়কুঠিতে ‘কফি বার’ নামে একটি ফাস্টফুডের দোকান করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গা দখল করেছে সিটি করপোরেশন। পাশেই মহানগর যুবলীগ কর্মী মুন্না রহমানসহ আরও কয়েকজন জায়গা দখল করে ফাস্টফুডের দোকান আর কয়েকটি বাড়িঘর গড়ে তুলেছেন। নদীর জায়গা দখল সম্পর্কে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘কিছু জায়গা সৌন্দর্যবর্ধন করে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে মানুষ পদ্মা নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে বাড়তি বিনোদন পাচ্ছে। কিছু জায়গা স্থানীয়রা জোর করে দখলও করেছে। সেগুলো উদ্ধার করা হবে।’ দখলে এগিয়ে সরকারি দলের নেতারা। রাস্তা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়। নগরীর অলকার মোড় এলাকায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনে বিদ্যুতের পোল ঘেঁষে রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থানীয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। রাজশাহীর কাটাখালী বাজারের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই এখন মুশকিল। খাল দখল করে একের পর এক গড়ে তোলা হয়ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। পদ্মার পানি প্রবাহের জন্য খালটি খনন করা হয়েছিল। একই অবস্থা নগরীর চৌদ্দপাই এলাকা দিয়ে যাওয়া আরেকটি খালেরও। সেটি দখল করেও গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়। এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন কাটাখালী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী। পৌর মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘খালটি আমরা আর রক্ষা করতে পারছি না। যে যার মতো করে দখল করে নিচ্ছে। এ নিয়ে পাউবোও নীরব ভূমিকা পালন করছে। সেই সুযোগে খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করে কেউ কেউ আবার সেগুলো বিক্রিও করে দিচ্ছে।’ নগরীর সিটি বাইপাসের খড়খড়ি এলাকায় এবং রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে ও নালা ভরাট করে বানানো হয়েছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে নওদাপাড়া এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনও বানানো হয়েছে জায়গা দখল করে। খড়খড়ি এলাকায় বাইপাসের উত্তর পাশের প্রায় আট কাঠা জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি এ মার্কেট গড়ে তুলেছেন। তবে জায়গাটির কিছু অংশ নিজের বলে দাবি করে শামসুল আলম বলেন, ‘সামনের কিছু অংশ সওজের। কিন্তু মার্কেটের সামনে জলাশয় হবে জেনে জায়গাটি ভরাট করা হয়েছে। আমি সরকারি কোনো জায়গা দখল করিনি।’ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, ‘দখলদারদের তালিকা করে আমরা পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। কিন্তু দখলদারদের এখনো উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। আমরা শিগগিরই এ নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেব।’

সর্বশেষ খবর