বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’ কথাটার সত্যায়ন হচ্ছে চট্টগ্রাম বইমেলায়। বইমেলায় প্রতিদিন দর্শক সমাগম লক্ষণীয়। পড়ন্ত বিকাল থেকেই ঢল নামে পাঠকের। প্রায় সব দর্শক-পাঠকই বই কিনছেন। ফলে বলা যায়, বইমেলায় দর্শক- ক্রেতা সমানে সমান। গতকাল বিকালে বইমেলায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে ঢাকা-চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণে হচ্ছে সম্মিলিত বইমেলা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আয়োজন এবং চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ ও সাহিত্যিক-শিল্প সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বইমেলা আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ৮৫০টি বই মেলায় এসেছে। তাছাড়া গত ১০ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় প্রায় ৬ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক দিনেই বিক্রি হয়েছে ৭৫ লাখ টাকার বই। চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ও বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব সুমন বড়–য়া বলেন, ‘পাঠককে উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়া হয়েছে, পাঠকও মনজুড়ে বই কিনে আয়োজকদের সম্মান দেখিয়েছে। এবারের মেলা আমাদের উৎসাহের কারণ হয়েছে। আগামীবার বৃহত্তর পরিসরে মেলা আয়োজনে এটি আমাদের জন্য প্রেরণা।’ চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের বইমেলা ঢাকার বইমেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো বইমেলায় আশানুরূপ সাড়া ফেলেছে।’ শৈলি প্রকাশনের পরিচালক আরিফ রায়হান বলেন, ‘প্রতিদিন পড়ন্ত বিকাল থেকেই পাঠক-দর্শকের ঢল নামে মেলায়। রাত ৯টা পর্যন্তই থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। বিকিকিনি ভালোই হচ্ছে।’ গতকাল বিকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলের সামনে ভিড় করছেন বইপ্রেমী পাঠকরা। কেউ দেখছেন, কেউ বা কিনছেন। কেবল বয়স্করা নন, শিশু-কিশোররাও সমান তালে বই দেখছে। জানা যায়, এবারের বইমেলায় ১১০টি স্টল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ঢাকার ৬০ ও চট্টগ্রামের ৫০টি। আগত পাঠক-দর্শকদের মননশীলতা তৈরিতে মেলার প্রবেশপথেই রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, প্রমথ চৌধুরী ও বেগম সুফিয়া কামালসহ বিশিষ্টজনদের অমিয় বাণী সমেত ছবি। দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে সেলফি জোন। এ জোনে কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ছবি তুলেছেন। আছে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা। নিরাপত্তায় আছে সিসি ক্যামেরা। আছে সুলভ মূল্যের খাবার। রাখা হয়েছে হেলথ ক্যাম্প। এখানে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়, ডায়াবেটিস, প্রেসার মাপার ব্যবস্থা আছে। শৃঙ্খলার জন্য আছে নিরাপত্তা ক্যাম্প।