শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভরাটের ফাঁদে বামনডাঙা

নদী বাঁচাও - ২১

আবদুল বারী, নীলফামারী

ভরাটের ফাঁদে বামনডাঙা

ভরাটের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ায় মরে যাচ্ছে বামনডাঙা। পানির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষিজমির সেচকাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। নদীকে জীবিকা করে খাওয়া মানুষগুলো হয়ে পড়েছে বেকার। নীলফামারী শহর ঘেঁষে বয়ে গেছে বামনডাঙা নদী। এই নদীর পাড়েই শহরে এককালে গড়ে উঠেছিল শাখামাছা বন্দর। দূরদূরান্ত থেকে নদীপথে চলাচল করত মালবাহী বড় বড় নৌকা। সেকালে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান বন্দর ছিল এটি। আজ আর নেই সেই নদী। ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ কমায় ধীরে ধীরে পড়েছে দখলদারদের কবলে, পরিণত  হয়েছে ক্ষীণধারায়। দখলদাররা নদীতে প্রতিনিয়ত নির্মাণ করছে নানা স্থাপনা। জেলা শহরের বাড়াইপাড়া গ্রামের হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ বলেন, ‘যে নদীতে স্রোতের জন্য দাঁড়ানো যেত না, এখন সেই নদী পানিশূন্য। প্রতিদিন মানুষ দখল করছে, বাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করছে। এসব কেউ দেখে না!’ তিনি জানান, শহরের গাছবাড়ী থেকে আনন্দবাবুর পুল পর্যন্ত নদী দখল করে কয়েকটি বড় রাইস মিল, ধান শুকানোর চাতাল, দোকান, বাড়িসহ একাধিক ছোট-বড় কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব রাইস মিলের ছাই নদীতে ফেলে আরও ভরাট করা হচ্ছে। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাধা দিচ্ছে না।

নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলোর কোনো চিহ্নই নেই। সমতলভূমির সঙ্গে মিশে গিয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে এক সময়কার খরস্রোতা নদ-নদীগুলো। পানিপ্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। এতে করে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমিন আগামী প্রজন্মের কাছে নদী শব্দটি মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। প্রমত্তা ওই নদীগুলোকে গ্রাস করেছে কতিপয় দখলদার। ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে যে যেভাবে পেরেছে দখলে নিয়েছে। শিল্পবর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে গেছে নদীর পানি। সবখানে দেখা যাচ্ছে  দখলেন চিহ্ন। শুধু তা-ই নয়, সরকারি ভূমি দফতরের কাগজপত্র বা নকশায় এখন অনেক নদীর অস্তিত্বই নেই। একশ্রেণির ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় দখলবাজরা নদীগুলোকে নিজস্ব জমি হিসেবে দাবি করে চলেছেন।

তবে এসব নদ-নদী রক্ষায় আদৌ কোনো উদ্যোগ নেই। এগুলোর সবই এখন মরা খাল। পলি পড়ে ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ দশা হয়েছে। এতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে। নদী নামের মরা খালগুলোর দুই পাড় জুড়ে এখন চাষ হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ফসল। পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। তিস্তা, বুড়িতিস্তা, চাড়ালকাটা, বুড়িখোড়া, ধুম, বামনডাঙা, খেড়–য়া, পাঙ্গা, কুমলাই, নাউতারা, যমুনেশ্বরী, ইছামতী, কলমদার, খড়খড়িয়া, দেওনাই, শালকী, খেরকাটি, চিকলী, আউলিয়াখানা, ইত্যাদি নীলফামারী জেলার অন্যতম নদ-নদী। সঠিক তথ্য সংরক্ষিত না থাকলেও অনেকের ধারণা, এসবের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। নদীপাড়ের কৃষকরা বোরো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় সেচসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষাকালে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। নদীর ক্ষীণধারা যেটুকু আছে তাতেও নদীর দুই পাড়ে শুকনো মৌসুমে চলছে বোরো আবাদ। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে এসব চিত্র।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালক, রিভারাইন পিপল ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নীলফামারীর নদীগুলোকে দখল-দূষণ মুক্ত করতে হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন নদী রক্ষায় তৎপর হলে দখল-দূষণ রোধ সম্ভব। নীলফামারীর নদীগুলোকে রক্ষা করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে নীলফামারীর পরিণতি হবে ভয়াবহ।  নদীগুলোর খননও জরুরি। নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল  সরকার  বলেন, নদী ও খালের টেন্ডার করেছি। খনন শুরু হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর