শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনুমতি ছাড়াই পুরান ঢাকায় উঁচু হচ্ছে ভবন

তোয়াক্কা করছে না বিল্ডিং কোড

মাহবুব মমতাজী

পুরান ঢাকায় অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতলবিশিষ্ট ভবন। জাতীয় বিল্ডিং কোডের তোয়াক্কা না করেই এসব করছেন ভবন মালিকরা। কোথাও আবার এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নির্মাণ বন্ধের নোটিস দিলেও ভবনের কাজ অব্যাহত রাখেন তারা। দয়াগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, গেন্ডারিয়া, পাটুয়াটুলি, শাঁখারীবাজার, বাবুবাজার ও লালবাগ থেকে পাওয়া তথ্যে ফুটে উঠেছে এসব চিত্র। এসব এলাকায় দুই শতাংশ থেকে দুই কাঠা জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচতলার উঁচু ভবন। ফলে বেশিরভাগই থাকছে ঝুঁকিপূর্ণ। এতে প্রতিনিয়ত শঙ্কা বাড়ছে। ভবন মালিকদের এসব কাজকে অবৈধ বলে গণ্যও করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ইসলামপুরের ৬০ নম্বর হোল্ডিংয়ে ভবন নির্মাণকালে চারতলা বিশিষ্ট প্লানিং করা হয় বলে জানা গেছে। পরে ভবনটির মালিক পাঁচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন। অনুমোদন ছাড়াই নিজস্ব ক্ষমতাবলে সামান্য জায়গার মধ্যে লালবাগের ৩ নম্বর বি সি দাস রোডের বাড়িটি তিনতলা থেকে ছয়তলায় নির্মাণ করেছেন বাড়ির মালিক কাজী আবেদ। তাকে কারণ দর্শানোর জবাব এবং বাড়ির নকশা দেখাতে না পারায় অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলতে গত বছর ৩ ডিসেম্বর রাজউকের ৫ নম্বর জোনের অথরাইজড অফিসারের স্বাক্ষরে একটি চূড়ান্ত নোটিস দেওয়া হয়। এর প্রায় ৪ মাস পার হলেও বাড়ির নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখেন কাজী আবেদ। এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ির প্লান পাস করা আছে। এখন কাগজপত্রগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমাদের নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ হলে রাজউক যা ব্যবস্থা নেবে আমরা তাই করব। ওই বাড়ির প্রতিবেশী আফরোজ আলম ও কাজী আশরাফ উদ্দিন বাবু জানান, প্রায় শত বছর আগে বাড়িটি প্রথমে একতলা করা হয়। কয়েক বছর পর দোতলা এবং তিনতলা করা হয়। অনেক বছর পর এখন আবার ছয়তলা পর্যন্ত করা হচ্ছে।  জানা যায়, লালবাগের ওই বাড়ি ছাড়াও বাবুবাজার মিটফোর্ড রোডের ৫৭ সি-মঞ্জুর মার্কেটটি প্রথমে পাঁচতলা গড়ে তোলা হয়। এরপর তা আরও একতলা বাড়িয়ে ছয়তলায় উন্নীত করা হয়েছে। দয়াগঞ্জের বেগমগঞ্জ লেনে ১৭, ১৮/১-জ, ১৮/১-দ-বি, ১৯/৫/১ এবং ১৯/সি-১ এর পাশের ভবনটি ও ২৯ নম্বর বানিয়ানগর লেনে একইভাবে বাড়ানো হয়েছে। বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার ফুজি কালারের ভবনটিও দুইতলা ভেঙে করা হয়েছে চারতলা। এদিকে শাঁখারীবাজারের ১৪৩টি ভবনকে ঐতিহ্য ঘোষণা করে তা সংরক্ষণের জন্য ২০০৯ সালে একটি সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। এ সময় ভবনগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংস্কার বা ভেঙে নতুন করে নির্মাণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই শাঁখারীবাজারের ১৫, ২৭ ও ১০৯ নম্বর বাড়ি ভেঙে স্বল্প পরিসরে নতুন করে পাঁচতলা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পরে রাজউকে অভিযোগ করা হলে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গেছে। রাজউক সূত্র জানায়, ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ অনুমোদনের বাইরেও প্রতি বছর শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে পুরান ঢাকায় এই প্রবণতা অনেক বেশি। রাজউকের পরিচালক (জোন-৫) শাহ আলম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অবৈধ বা অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন শনাক্তে পুরান ঢাকার চকবাজার ও তার আশপাশে কয়েক দফা রেকি করেছি।

শুধু পুরান ঢাকার এসব এলাকাতেই নয়, রাজউকের ৮টি জোনেই ইন্সপেকশন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৫ এপ্রিল আমাদের নকশার অনুমোদন নিয়ে এবং নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত সময়ে অবৈধ ভবন কিংবা ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলতে বলা হবে। যদি তারা তা না করে তাহলে আমরা ভেঙে দিব এবং ভাঙার ব্যয়ভার বহন করতে হবে ভবন মালিককে। 

সর্বশেষ খবর