সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
সিআইডির অভিযোগপত্র ১২৫ জনের বিরুদ্ধে

প্রশ্নের সঙ্গে সমাধানও দিত ফাঁসকারীরা

আদালত প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি সুমন কুমার দাস এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার এবং আদালতের পুলিশপ্রধান আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় ১২৫ জনের মধ্যে গ্রেফতার আসামির সংখ্যা ৪৭ জন। পলাতক ৭৮ জন। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ৪৬ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে গ্রেফতার সব আসামি জামিনে আছেন। এ ছাড়া পলাতক ৭৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলায় ৬৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আগামী ২৬ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে। নিয়মানুযায়ী ওই দিন আদালতে চার্জশিট উপস্থাপনের পর গ্রহণযোগ্যতার শুনানি হবে। এ ছাড়া ৮৯ আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সাঠিক নাম-ঠিকানা ও অভিযোগ পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করার কথা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর একজন গণমাধ্যমকর্মীর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন মধ্যরাতে দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। অভিযানে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় রাফি নামে ভর্তিপ্রার্থী এক শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর, ২০১৭ শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে প্রশ্ন ফাঁস চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করত। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের পর দুই বছর ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিল তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ আরও কয়েকজন। সে সময় ধারাবাহিক অভিযানে মূল হোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত দুভাবে প্রশ্ন ফাঁস চক্রটি কাজ করত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যে ছাপাখানা থেকে ছাপা হতো, চক্রের সদস্যরা সেই প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করত। এরপর পরীক্ষার আগের রাতে সেসব প্রশ্নের সমাধান বের করে ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করানো হতো।

এ ছাড়া পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হতো। ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সবাই চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে তাদের বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রটির মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও তাজুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন ইব্রাহিম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মাসুদ রহমান তাজুল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর