পবিত্র ঈদুল আজহা শেষে গত দুই দিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করেছে ঢাকাবাসী। ঈদের পরদিন ও গতকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সকাল থেকেই রাজধানীর পার্ক, গার্ডেন, চিড়িয়াখানাসহ সিনেমা হলগুলোতে ভিড় করেছে নগরবাসী। তবে বিনোদন কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দর্শানার্থীর সংখ্যা এবার বেশ কম; গত ঈদের তুলনায় অর্ধেকের মতো। এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রভাবও পড়েছে এবারের ঈদ বিনোদনে।
সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাতিরঝিলে ভিড় করা শুরু করেন রাজধানীবাসী। মিরপুর চিড়িয়াখানার টিকিটম্যান আলম জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় চিড়িয়াখানার গেট খোলার পর ১৫ মিনিটের ভারী বৃষ্টির কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যায়। পরে দুপুরের দিকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গতকালও সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল। মিরপুর চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় কম। ডেঙ্গুর প্রভাব ও বৃষ্টির কারণে এটা হতে পারে। তিনি জানান, গত মাসে আফ্রিকা থেকে নতুন দুটি বাঘ ও দুটি বাঘিনী আনা হয়েছে। বাঘ দুটির নাম টগর ও কদম; বাঘিনী দুটির নাম বেলি ও শিউলি। পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক কাওসার আলী বলেন, ঈদ ঘিরে চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ডিএমপির পাশাপাশি আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের চারজন সদস্য চিড়িয়াখানায় দায়িত্বে আছি। জনগণের নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
চিড়িয়াখানার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান শিখা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বিমল চন্দ্র ম ল টিকিট বিক্রি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এবার ঈদের দিন যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেটা এমনি সাধারণ দিনেও বিক্রি হয়। মঙ্গলবার কিছুটা বাড়লেও ঈদ হিসেবে এটা কিছুই না। আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো দর্শনার্থী আরও বাড়ত। ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানায় বানর, পাখি, ভাল্লুক, জিরাফ আর বাঘের খাঁচা ঘিরে দর্শনার্থীদের বড় জটলা দেখা যায়। বাঘকে কাছে পেয়ে ভয় ও উচ্ছ্বাসের মিশ্র অনুভূতির ছাপ দেখা যায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে। জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৩৭ প্রজাতির ২ হাজার ৭৬২টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘ, চিতাবাঘ, বানর, ভাল্লুক, সিংহ, হাতি, জলহস্তী, গন্ডার, ঘোড়া, হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, মায়া হরিণ, সাদা হংস, উট, বানর, বনগরু, অজগর, ময়ূর ইত্যাদি। চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ২০৮ একরজুড়ে অবস্থিত ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে বৃষ্টিধোয়া বৃক্ষের ছায়াতলে সময় কাটাতে হাজির হয়েছিলেন অনেকে; বাঁশবাগান, গোলাপ বাগান, শাপলা পুকুরের কোলঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে পাখির ডাক শুনে মানসিক প্রশান্তি খুঁজেছেন দর্শনার্থীরা। চিড়িয়াখানার মতো বোটানিক্যাল গার্ডেনেও খুব একটা ভিড় ছিল না। টিকিট বিক্রেতা ইদ্রিস খান বলেন, ঈদ উপলক্ষে এবার টিকিট বিক্রির হার অনেক কম। আমাদের চারটি টিকিট কাউন্টার; দর্শনার্থী কম দেখে আজ মাত্র একটি কাউন্টার চালু আছে। আগে ঈদের সময় চারজন টিকিট কেটেও দম ফেলানো যেত না। রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে বিকাল থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে; বৃষ্টি মাথায় ওয়াটার বোটে চড়ে সময় কাটান দর্শনার্থীরা। রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ান্ডারল্যান্ডেও (সাবেক শিশুমেলা) দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। অথচ অন্য বছরগুলোতে এই বিনোদন কেন্দ্রে ঈদের সময় থাকত উপচে পড়া ভিড়। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরেও গত ঈদের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কম। দর্শনার্থী ও জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে গেছে। এ কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। এ ছাড়া সকালে বৃষ্টি ছিল আর সারা দিন আবহাওয়া ভালো ছিল না। ফলে অন্য ঈদগুলোর তুলনায় দর্শনার্থী অনেক কম।
ঈদের ছুটিতে শিশুদের কলকাকলিতে মুখর ছিল রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বসুন্ধরা সিটির ইনডোর থিম পার্ক- টগি ওয়ার্ল্ড। সেখানে দেখা গেল শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও মেতেছেন ঈদ আনন্দে। বয়স ভুলে কেউ চেপেছেন ঘোড়ার পিঠে, কেউবা নাগরদোলায়, কেউ আবার বাম্পার কারে। টগি ওয়ার্ল্ড-এ দিনভর ছিল এই আনন্দ আয়োজন। বৃষ্টির কারণে যমুনা ফিউচার পার্কের আউটডোর রাইড কার্নিভালে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও ইনডোর ফিউচার ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল বলে জানান পার্কের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ইনডোর গেমসে বাচ্চাদের বিভিন্ন গেইম, থ্রিডি, সেভেনডিসহ অন্যান্য রাইডে পরিবার পরিজন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দর্শনার্থীরা।
ঈদে ঢাকার প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও বেশ ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ও ‘বেপরোয়া’ নামে দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে ঢাকায়। স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাসের পাশাপাশি বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, শ্যামলী সিনেমাতেও দর্শকদের ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন হলগুলোর ব্যবস্থাপকরা। সিনেমা হলগুলো সরব থাকলেও জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো মঞ্চনাটকের প্রদর্শন হয়নি গতকাল পর্যন্ত। ঈদের জন্য গতকাল পর্যন্ত মিলনায়তনগুলোর অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। এর বাইরে সংস্কারকাজ চলায় বন্ধ আছে শাহবাগ শিশুপার্ক। আর ঈদের ছুটির কারণে বন্ধ আছে বিজয় সরণি মোড়ের বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর।