সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্ধুর জন্য বন্ধুর ফাঁদ

মির্জা মেহেদী তমাল

বন্ধুর জন্য বন্ধুর ফাঁদ

জুয়েল আহম্মেদ (২২)। চাকরি করেন ঢাকার  তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার স্টান্ডার্ড গ্রুপে।  সেখানে পরিচয় হয় আবু মুসা ওরফে প্রিন্স আল মুসার সঙ্গে। অল্পদিনেই বন্ধুত্ব তাদের। দিন যত  পেরোয় তাদের বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। একদিন মুসা তার অপর এক বন্ধু কুরবান আলীকে নিয়ে আসেন অফিসে। জুয়েলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে  দেন। দুজন থেকে তারা এখন তিন বন্ধু। একজন আরেকজনকে ছাড়া তাদের যেন চলেই না। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। পিতা মো. আ. রহমান, সাং-লক্ষ্মীপুর, থানা-গুরুদাসপুর, জেলা-নাটোরকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ অধিনায়ক, র‌্যাব-২, শেরেবাংলা নগর, ঢাকার বরাবরে আসে। অভিযোগে জানা যায় ভিকটিম মো. জুয়েল আহম্মেদ কিছু দিন আগে ডিএমপি ঢাকা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় স্টান্ডার্ড গ্রুপ, ঢাকায় চাকরি করতেন। চাকরি করার সুবাদে মো. আবু মুসা ওরফে প্রিন্স আল মুসার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাদের বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে মো. আবু মুসা ওরফে প্রিন্স আল মুসা এর অপর বন্ধু মো. কুরবান আলীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কিছুদিন পর জুয়েল আহম্মেদ চাকরি ছেড়ে দেন। চলে যান নিজ গ্রামের বাড়িতে। তিন বন্ধুর মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ কমে গেলেও ফোনে কথাবার্তা হতো। সবাই সবার খোঁজ রাখতেন। চাকরি ছেড়ে জুয়েল বেকার। গ্রামেই ঘুরেফিরে খান। তবে তার বন্ধুদের বলে রেখেছিলেন, ভালো কোনো চাকরির সংবাদ পেলে যেন তাকে খবর দেওয়া হয়।

একদিন মুসা ফোন দেয় জুয়েলকে। বলে, ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমসে ভালো চাকরি আছে। ইচ্ছা করলে সে চাকরিটা করতে পারে। সেখানে তার যোগাযোগ আছে। সাহায্য করতে পারবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে। জুয়েল চাকরি করতে রাজি হয়ে যায়। আবেদন করে চাকরির জন্য। কিছুদিন পর জুয়েলের বাড়ির ঠিকানায় চাকরির ইন্টারভিউ কার্ড আসে। সেই ইন্টারভিউ কার্ড পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেল জুয়েল। তার খুশির আর সীমা নেই। শুধু সেই কার্ডই নয়, মোবাইল ফোনে কলও এসেছে। তাকে ফোনে কাস্টমস থেকে বলা হয়, সে যেন ঢাকায় এসে যোগাযোগ করে। জুয়েল তার এই ঘটনাটি প্রিয় বন্ধু মুসা আর কুরবান আলীকে জানায়। তারাও ভীষণ খুশি হয়েছে খবরটি জেনে। ঢাকায় এলে তারা সঙ্গে থাকবে বলে মুসা জানায়। জুয়েল ঢাকায় আসে। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল তার বন্ধু মুসা আর কুরবান। সেখান থেকে কুরবান আলী নিজের বাসায় নিয়ে যায় জুয়েলকে। একটি ঘরে নিয়েই নিজের রূপ প্রকাশ করে। হঠাৎ করেই মারধর শুরু করে কুরবান আলী। বেধরক পেটায় জুয়েলকে। জুয়েল কিছুই বুঝতে পারছিল না। এরপর আসে মুসা। কুরবান আর মুসা মিলে জুয়েলকে এবার মারধর করে। ভয়ভীতি দেখায়। তাদের দাবি চার লাখ টাকা। জুয়েলের পরিবারের কাছে ফোন দেয় মুসা। কিন্তু তারা টাকা কোথায় পাবে বলে অনুনয়-বিনয় করলে আরও ক্ষুব্ধ হয় তারা। তখন তারা জুয়েলের প্রথমে তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে চড়, ঘুষি মারতে থাকে এবং পরবর্তীতে হাতুড়ি, মোটা ইলেকট্রিক তার ইত্যাদি দিয়ে টর্চার করতে থাকে। তখন সে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর কথা বলে। তারা জুয়েল আহম্মেদের মুক্তিপণের জন্য চার লাখ টাকা দাবি করে। তারা আরও বলে তাদের চাহিদামতো টাকা দিলে জুয়েলকে মুক্তি দেওয়া হবে, অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের দেনদরবার ও এ সংক্রান্ত কোনো কূলকিনারা হয় না। জুয়েলের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় র‌্যাবকে। র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। অভিযানের পরিকল্পনা আঁটে। র‌্যাব-২ অভিযোগ পেয়ে জুয়েলকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়। সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। কুরবান আলীর ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগ করে তাকে মুক্তিপণের টাকা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কুরবান আলী মোবাইলের বিকাশ নম্বর দেয়। বিভিন্ন সময়ে ওই নম্বরে দুই লাখ টাকা প্রদান করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে র‌্যাব-২-এর একটি আভিযানিক দল অপহৃত জুয়েলকে উদ্ধারের জন্য ফাঁদ পাতে। সে মতে, গত ৮ জানুয়ারি বিকালে র‌্যাব কর্মকর্তা অপহরণকারী কুরবান আলীকে আটক করে। আটককৃত আসামির দেওয়া তথ্য মতে ভিকটিম মো. জুয়েল আহম্মেদকে উদ্ধার করে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মুসা জুয়েল আহম্মেদকে অপহরণ করে আটক রেখে মুক্তিপণের টাকা দাবির কথা স্বীকার করে। কুরবান আলী স্বীকার করে যে, সে এবং অপর পলাতক আসামি আবু মুসা পরস্পর যোগসাজশে মো. জুয়েল আহম্মেদকে ডিএমপি ঢাকার ফার্মগেট হলিক্রস স্কুলের সামনে থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে বাসায় কক্ষে আটক করে রাখে। জুয়েলকে মারধর করে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি ও নগদ ১৯ হাজার ৮০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেওয়ার কথা স্বীকার করে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর