মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভায় আইন অনুমোদন

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অলস টাকা যাবে উন্নয়নকাজে

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত টাকা রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে একটি আইন করছে সরকার। নতুন এ আইনের খসড়া গতকাল অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন আইন, ২০১৯-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম নিয়মিত সংবাদ  ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আছে। এ টাকাগুলো কোনো ভালো কাজে ইনভেস্ট হচ্ছে না। এজন্য সরকারের পলিসি হলো, নতুন আইনের মাধ্যমে কিছু প্রভিশন রেখে বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসা। আমাদের অনেক প্রজেক্ট আছে, জনকল্যাণমূলক কাজ, যেগুলো আর্থিক সংকটের কারণে ফাইন্যান্স করা যায় না। এ লক্ষ্যে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। তা ছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে। এরপর যে অর্থ বাকি থাকবে, তা সরকারের কোষাগারে জমা দেবে। অর্থাৎ তাদের বিপদে ফেলা হবে না, প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাকি অর্থটা দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ ব্যবস্থা হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনে কোনো সমস্যা হবে না। আর্থিক শৃঙ্খলায়ও কোনো সমস্যা হবে না। এটা হচ্ছে তাদের যে আইডল মানি (অলস অর্থ) আছে, তা সরকারের ইনভেস্টমেন্টে কাজে লাগানো। আইনি অধিকারও ক্ষুণœ করা হয়নি, তাদের যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা তো সরকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, পরিচালন ব্যয় হিসেবে কোন সংস্থা কত টাকা রাখবে, তা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।

শফিউল আলম একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২৫টি বড় প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা (মে ২০১৯-এর তথ্য), পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, পিডিবির ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, রাজউকের ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কতটি- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বাদ দিলে এ রকম ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বোর্ডগুলো আছে। যেমন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। তাদের অনেক আইডল মানি আছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আকারে ছোট হলেও ধরনের দিক দিয়ে এ আইন হবে ‘সুপারসিডিং’। অর্থাৎ, অন্যান্য করপোরেশনের আইনে যা-ই বলা থাকুক না কেন, তার ওপরও এ আইনের বিধান কার্যকর হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন আইন, ২০১৯-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনকে (বিআরটিসি) সেবা দিতে হবে। তিনি বলেন, আইনে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতি যেমন হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশ্ব ইজতেমা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং অনুরূপ কোনো পরিস্থিতিতে বিআরটিসি সেবা প্রদান করবে। তিনি জানান, বিটিআরসির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৬ কোটি টাকা সেটিকে ১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না বলে প্রস্তাব করা হয়েছে যা বিশেষ সাধারণ সভায় ঠিক করা হবে। নতুন আইনে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১১ থেকে বৃদ্ধি করে ২৪ জন করা হয়েছে।

তিনি জানান, এত দিন ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে চলছিল বিআরটিসি। এ অধ্যাদেশকে ঘষামাজা করে আইনে পরিণত করা হয়েছে। এটির খুব বেশি পরিবর্তন নেই, কারণ এটি আগেই অনেক পরিবর্তন করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর