শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কাস্টম বন্ড অটোমেশন

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পরও নেই অগ্রগতি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া বন্ড অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় বন্ড ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পরও নেই আশানুরূপ অগ্রগতি। সরকারের নিজস্ব অর্থে ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে চালুর কথা ছিল চলতি ২০১৯ সালের জুন মাসে। বন্ড সুবিধার অনিয়ম রোধ এবং ব্যবসায়ীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজের শম্বুকগতির কারণে এর সুফল পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। নতুন করে আরও দুই বছর প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর পর বর্তমানে ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বন্ড অটোমেশন সিস্টেমের। এদিকে বন্ড ব্যবস্থাপনায় হয়রানি দূর, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধ, আর্থিক অনিয়ম রোধ এবং খোলা বাজারে বন্ড সুবিধার পণ্য পাচার হওয়া রোধ করে এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেওয়া এই প্রকল্প চালু করতে কেন এত দেরি হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বন্ড অটোমেশন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা সব সময় সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকায় থাকলেও রহস্যজনক কারণে এই প্রকল্প গতি পাচ্ছে না! ফলে বন্ড অটোমেশন নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। উপ-প্রকল্প পরিচালক হাসনাইন মাহমুদ বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কনসালট্যান্ট ফার্ম নিয়োগ  দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক সেমিনার ও মতবিনিময় করার ফলে অটোমেশন পদ্ধতি কী হবে তাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে এখানে কারও কোনো অবহেলা নেই। টেকনিক্যাল কাজগুলোই এরকম-সময়সাপেক্ষ। জানা গেছে, সারা দেশে ৫ হাজারের অধিক বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের বন্ড ব্যবস্থাপনা চলে ম্যানুয়াল বা সনাতন পদ্ধতিতে। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে বন্ড অটোমেশনে যুক্ত করা কঠিন বিষয়। আর এই প্রক্রিয়ায় বাধা থাকে সবসময় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর, কিন্তু তারা সবসময় সহযোগিতার কথা বলে আসছে। জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি ও এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের বিকল্প নেই। সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে হলে দ্রুতই এই অটোমেশন প্রকল্প চালু করা উচিত। বন্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্ড ব্যবস্থাপনা অটোমেটেড বা অটোমেশন হলে একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তার পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি, গুদামে মজুদ করা মালের হিসাব, গুদাম ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনে ব্যবহার এবং রপ্তানির পুরোটাই একটি কম্পিউটার জেনারেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে ইন টু বন্ড রেজিস্ট্রার (পণ্য গুদামে প্রবেশ) ও এক্স বন্ড রেজিস্ট্রারে (বাহির হওয়া পণ্য গুদাম থেকে) তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বন্ড অফিসে ব্যবসায়ীদের হয়রানিতে পড়তে হবে না। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, বন্ড ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নিয়মিত অডিট ও কারখানার উৎপাদন তদারকি করা। চট্টগ্রামে দেড় হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু লোকবল আছে মাত্র ৭৫ জন। ফলে সঠিকভাবে এই কাজ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে কম্পিউটারেই বসে তদারকি সম্ভব হবে। এতে ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মধ্যেও দূরত্ব কমে আসবে। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, বন্ড অটোমেশনের কাজটি দেওয়া হয়েছে কনসালট্যান্ট সিনেসিস আইটি ফার্মকে। বন্ড অটোমেশনের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কাজের মধ্যে হয়েছে কয়েকটি সেমিনার। কোন পদ্ধতিতে অটোমেশন হবে তা চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কোন পদ্ধতিতে বা কয় ধাপে বন্ড ব্যবস্থাপনা চলছে তার একটি চিত্র জমা দিয়েছে কনাসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান সিনেসিস। এখন কী করা হবে সেটি চূড়ান্ত হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। গার্মেন্ট ও পেপার-ডুপ্লেক্স বোর্ড ব্যবসায়ীরা জানান, অসাধু ব্যবসায়ী ও শক্তিশালী চক্রের খপ্পরে পড়ে বন্ড অটোমেশন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কারণ একবার অটোমেশন চালু হলে বন্ড পণ্য চোরাকারবারিদের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হবে। এখন অনেকে বন্ড সুবিধায় আনা পণ্যের অপব্যবহার করে যেভাবে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন, অটোমেশন চালু হলে তা অতটা সহজ হবে না। সুতরাং তারা চাইবে বন্ডে অটোমেশন সিস্টেম চালু না হোক। এনবিআরকে এই জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর