শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাঁকড়া চাষে বদলে যাবে উপকূলের অর্থনীতি

দক্ষিণাঞ্চলের লাভজনক রপ্তানি পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করে ২১৭ কোটি টাকা আয়

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

কাঁকড়া চাষে বদলে যাবে উপকূলের অর্থনীতি

কাঁকড়া দক্ষিণাঞ্চলের লাভজনক রপ্তানি পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করে ২১৭ কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ। চিংড়ির চেয়ে লাভজনক ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়া চাষ দিন দিন বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের নরম খোলসের কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হিমায়িত করে এ কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে সহজে মুনাফা অর্জন করতে পারেন চাষিরা। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত কাঁকড়া পোনা সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন চাষিরা। জানা যায়, দেশে বাণিজ্যিকভাবে হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন এখনো ব্যাপকহারে শুরু হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ চাষির বছরে চাহিদা রয়েছে গড়ে ১২০ কোটি কাঁকড়া পোনার। এর মধ্যে গত বছর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নোয়াবেকি গণমুখী ফাউন্ডেশন পোনা সরবরাহ করেছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ। এ ছাড়া সরকারিভাবে খুলনার পাইকগাছা ও কক্সবাজারে কাঁকড়া পোনার হ্যাচারির কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো তা উৎপাদনে যেতে পারেনি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘কাঁকড়া চাষে প্রকৃতি থেকে নির্বিচারে আহরণ করা হয় ছোট-বড় ও মা কাঁকড়া। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি এটি হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ কারণে হ্যাচারিতে কৃত্রিমভাবে কাঁকড়া পোনা উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হ্যাচারির পোনায় উৎপাদিত কাঁকড়ার পুষ্টি, গুণগতমান ও বৃদ্ধির হার অনেক ভালো। এতে কাঁকড়ার স্বজাতভোজী-প্রবণতা (অন্য কাঁকড়াকে খেয়ে ফেলা) কমানো যাবে এবং প্রকৃতি থেকে পোনা আহরণ কমলে কাঁকড়াসম্পদকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো যাবে।’ এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারিভাবে বন বিভাগ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করলেও কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম মার্চ-এপ্রিল। মে-জুনে এক থেকে দুই মাস বয়সের কাঁকড়া পোনার প্রাচুর্য বেশি; যা প্রমাণ করে মার্চ-এপ্রিল কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ ছাড়া গবেষণায় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাঁকড়ার দ্বিতীয় আরেকটি প্রজনন মৌসুমের উপস্থিতি দেখা গেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে কাঁকড়া চাষ ও মোটাতাজাকরণের জন্য পোনা আহরণ সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতিতে কাঁকড়া সংরক্ষণ ও এ সম্পদকে বাঁচাতে নির্বিচারে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কাঁকড়া পোনা ব্যবহার করতে হবে। কাঁকড়া চাষে হ্যাচারি উৎপাদিত পোনা ব্যবহার বাড়াতে পারলে হ্যাচারি, সি-ফুড ফ্রিজিং ও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোয় কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।’

 বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশের মার্কেট ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মুহাম্মদ আবুল হোসাইন বলেন, ‘হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনায় কাঁকড়া চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে। ২০১৪ সাল থেকে কাঁকড়া রপ্তানি লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে খুলনা, বরিশাল ও কক্সবাজারের ৪ লাখ চাষি কাঁকড়া চাষে জড়িত। কিন্তু প্রতি বছর পোনার চাহিদার প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রকৃতি থেকে আহরণ করা হয়। এতে এরই মধ্যে কাঁকড়া পোনার স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা সরবরাহ বাড়ানো গেলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি বদলে দিতে পারে কাঁকড়া চাষ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর