রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়ক নয় এ যেন পার্কিং এরিয়া

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সড়ক নয় এ যেন পার্কিং এরিয়া

রাজধানীতে সচিবালয়ের পাশের সড়কে এলোমেলো করে রাখা গাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রবীন্দ্র সরণি পুরো রাস্তাজুড়ে গাড়ি পার্ক করে রাখা। পাশের সুউচ্চ ভবনে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলে আসা লোকজনের গাড়ি রেখেছে সড়কজুড়ে। ভবনের নিচতলায় পার্কিংয়ের জায়গায় খোলা হয়েছে দোকান। এভাবে সড়ককে পার্কিং এরিয়ায় পরিণত করায় তৈরি হচ্ছে যানজট। শুধু উত্তরা নয়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কের চিত্র এমনই। রাজউকের ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, ছয়তলার ওপরে নির্মিত সব ভবনে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ ভবনে নির্মাণবিধি অমান্য করে পার্কিংয়ের জায়গায় দোকানপাট, গুদাম বানানো হয়েছে। প্রতি মাসে এসব স্থাপনা থেকে ভাড়া তুলছেন মালিক। রাস্তায় গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। গুলশান-বনানীর অধিকাংশ বাড়ির গেটে লেখা আছে ‘অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন’। এই বাড়িগুলোতে বেড়াতে আসা অতিথিদের গাড়ি রাখার জায়গা হলো রাস্তা। আবাসিক এলাকার ভিতরের স্বল্প প্রস্থের রাস্তায় গাড়ি রাখায় প্রতিনিয়ত তৈরি হয় গাড়ির জট। মতিঝিল এলাকায় অধিকাংশ বহুতল ভবনেই নেই পার্কিং সুবিধা। এসব ভবনের বেশিরভাগই ৯০ দশকের পরে নির্মিত হয়েছে। এসব ভবনে পার্কিং স্পেস রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। তারপরও রাজউকের ছাড়পত্র নিয়েই নকশাবহির্ভূতভাবে পার্কিং ছাড়াই বহুতল ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে।

জানা গেছে, মতিঝিলে বহুতলবিশিষ্ট ভবন রয়েছে ১৫৭টি। এর মধ্যে মাত্র ১৭টিতে আছে পার্কিং স্পেস। বাকি ১৪০টি ভবনেই গাড়ি রাখার ব্যবস্থা নেই। পার্কিং ব্যবস্থাহীন ভবন, মার্কেট, শপিং মল এখন যানজটসহ জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিল্ডিং কোড অমান্য করে প্রকাশ্যে একের পর এক ভবন গড়ে উঠছে নগরজুড়ে। সুউচ্চ ভবনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের পুরোটা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নিয়ম না মানলেও তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তায় সারিসারি গাড়ি রাখা। রাস্তার দুই পাশে গাড়ি রাখায় এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অফিসের সময় শুরু হতেই প্রতিযোগিতা চলে কার আগে কে সড়কে গাড়ি রাখতে পারে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এরকম এলোমেলো পার্কিংয়ের কারণে সারাদিনই লেগে থাকে যানজট।

মতিঝিল, দিলকুশা, বিসিআইসি রোড, শাপলা চত্বরের চারপাশ, মধুমিতা সিনেমা হল রোড, জীবন বীমা ভবনের পাশের রাস্তায় চার-পাঁচ সারি করে গাড়ি পার্ক করা হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রাইভেট সেক্টরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রাখা হয় রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। কারওয়ান বাজার এলাকায় বড় আয়তনের অফিসে নেই পার্কিং স্পেস। দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা জায়গায় রাখা হয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল।

রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো আবাসিক এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকায়। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফাস্টফুডের দোকান। এমনকি বাড়ির গ্যারেজেও চলছে ব্যবসা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা দখল করে রাখা হচ্ছে গাড়ি। রাস্তায় পার্ক করে রাখায় যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ঢাকা ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিটি বাড়িতে পার্কিংয়ের জায়গা রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নিজেদের গাড়ি রাস্তায় রেখে যানজট তৈরি করছে মানুষ। অতিথি দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে তাদের গাড়িও রাস্তার ওপরেই রাখছে। এ কেমন ভদ্রতা! মানুষ সচেতন হলে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো। আমরা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি। নিয়ম না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, নিয়ম না মানাই যেন এখন নিয়ম হয়ে গেছে। পার্কিংয়ের জায়গায় গুদাম, দোকান তৈরি করায় প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি মুনাফাভোগী বাড়িওয়ালা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ রাজউকের।

সর্বশেষ খবর