শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু ২৮ ডিসেম্বর, শেষ ২০২৩

বছরে সেবা পাবেন এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহু প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ২০২৩ সালের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় বিশ্বমানের থার্ড টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এসব তথ্য দিয়ে বলেছেন, প্রকল্পটি চালু হলে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর।

গতকাল দুপুরে বিমানবন্দরের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। মো. মফিদুর রহমান বলেন, আমাদের সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প এটি। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ উপকরণের মান নিয়ে আমরা কোনো আপস করিনি। অনেক ঠিকাদার চেয়েছিল নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ম্যানেজ করার। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ দিইনি। জাইকার চাওয়া অনুযায়ী, উন্নত দেশের এয়ারপোর্টে যেসব উপকরণ লাগানো হয়েছে, সেই উপকরণ এখানেও লাগানো হবে। বেবিচকের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব কাজে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও যদি কেউ জড়িত থাকে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি ঠিকাদার কোম্পানিকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেবিচকেও কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি।’ মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল হবে পুরোপুরি অটোমেটিক। সব সংস্থাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। সেখানে নির্ধারিত স্থানে দায়িত্ব থাকবে, ট্যানেল থাকবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং উন্নত হবে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ১২টি। প্রতি ৪টি ব্রিজের জন্য একটি লিফট থাকবে। কনভয় বেল্ট থাকবে ১২টি। চেক-ইন কাউন্টার হবে ২০টি। প্রতিটি কাউন্টারে সিকিউরিটি স্ক্যানার থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার সক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কাউন্টারে। এ ছাড়া এক হাজার ২০০ গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে।  বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রশ্নে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, নিরাপত্তা বিশ্বমানের করতে এরই মধ্যে নতুন আরও কিছু যন্ত্রপাতি এসে গেছে। এগুলো শিগগিরই লাগানো হবে। দুবাইসহ বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে যে মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে এখানেও তা ব্যবহার করা হবে।

 তিনি বলেন, বিমানবন্দরে শীতে পাখির উপদ্রব কমাতে যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই চায় বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। যেহেতু প্রতি বছরই যাত্রী বাড়ছে তাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

তবে কক্সবাজার বিমানবন্দর চালু হলে চাপ অনেকটা কমবে। বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ক্যাটাগরি মাঝখানে খারাপ হয়েছিল, সরকার দিকনির্দেশনা দেওয়ায় আমরা কাজ করে ক্যাটাগরিতে উন্নতি করেছি। লন্ডন ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়ায়। আমেরিকায় ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে। সে দেশের একটি টিম আসবে আগামী সপ্তাহে। তারা এলে অ্যাসেসমেন্ট দেবে, তারপর একটা সিদ্ধান্ত আসবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে টরেন্টো ফ্লাইট চালুর লক্ষ্যে কাজ করছি। এটা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন ক্যাটাগরিতে দ্রুত উন্নতি করায় প্রশংসা করেছে।  বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ড্রোন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। অনুমতি নিয়ে সেটা পরিচালনা করতে হবে। কেউ চাইলে অনলাইনে চাহিদা দিতে পারবেন, কোথায় পরিচালনা করবেন। সব সংস্থার অনুমতি নিয়ে ড্রোন পরিচালনা করা যাবে। পদ্মার আশপাশে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার জন্য দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান বেবিচক চেয়ারম্যান। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) হাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) মিজানুর রহমান, সদস্য (নিরাপত্তা) শহীদুজ্জামান ফারুকী, সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) এয়ার কমোডর খালিদ হোসেন, সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান, সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড ও রেগুলেশন) গ্রুপ ক্যাপ্টেন জিয়াউল কবির, প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোম্বামী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর