বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বই ও মোটরসাইকেল রপ্তানি

শুল্ক প্রত্যাহার চায় ভারত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রাজধানীর নীলক্ষেতে যে মূল্যে বই পাওয়া যায়, সেই দামে ‘অরিজিনাল’ বই বাংলাদেশে রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। আর ভারতে যে দামে তাদের কোম্পানিগুলো মোটরসাইকেল বিক্রি করছে সেই দামেই বাংলাদেশে টু হুইলার বাইক বিক্রি করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রস্তাব গৃহীত হলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, আজ থেকে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বেশকিছু ইস্যুতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘রিমোভাল ইমপোর্ট ডিউটিজ অন ভেরিয়াস প্রোডাক্টস’। তবে ভারতের এই প্রস্তাবের সঙ্গে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ জড়িত বলে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারত তাদের প্রস্তাবে বলছে, তাদের দেশের সমরেশ, শীর্ষেন্দু, সুনীলসহ বিভিন্ন লেখক, ঔপন্যাসিক, কবির বই নীলক্ষেতে পাইরেটেড হয়ে সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে তাদের প্রকাশনীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটির দাবি, বাংলাদেশ বই আমদানির ওপর যে শুল্কারোপ করে রেখেছে, সেটি প্রত্যাহার করা হলে নীলক্ষেতের দামেই মূল প্রকাশনীর বইটি তারা এ দেশের পাঠকদের দিতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নীলক্ষেতে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি বই সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে এটি যেমন সত্য, তেমনি দেশে একটি শক্তিশালী প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্প গড়ে উঠেছে যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারির বইমেলা ঘিরে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নতুন বই ছাপায় দেশের প্রকাশনী সংস্থাগুলো। এখন এই খাতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে নিম্নমানের বিদেশি বইয়ে সয়লাব হয়ে যাবে দেশের বাজার। ফলে দেশের প্রকাশনা শিল্পগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।  একই ইস্যুতে বাংলাদেশে টু হুইলার বাইকের ওপর থেকেও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।

 দেশটি বলছে, বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর ওপর কমবেশি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক রয়েছে। এর ওপর রয়েছে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি। এ কারণে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল বেশি দামে কিনতে হয় বাংলাদেশি ভোক্তাদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশীয় মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স কোম্পানি রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো দেশে ইমপোর্ট ডিউটি আরোপ করা হয় দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এখন যদি ভারতের প্রস্তাব মেনে আমদানি শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয় তবে দেশীয় শিল্পগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।

 তিনি বলেন, বাংলাদেশে এরই মধ্যে ভারত, চীন, জাপানের কোম্পানিগুলো কারখানা করে মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার করছে। শুল্ক যদি কমাতেই হয়, তবে ‘র’ মেটেরিয়ালসের ওপর কমানো যেতে পারে; কিন্তু প্রস্তুতকৃত পণ্যের ওপর কমালে বাংলাদেশের শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার জন্য ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশের ভোজ্যতেল কারখানাগুলো পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সাফটার আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অন্তত ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতে সেটি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। সেই সুবিধা নিয়েই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতে ভোজ্যতেল রপ্তানি করে থাকে। তবে ভারত সন্দেহ করছে বাংলাদেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো ক্রুড তেল আমদানি করে যথাযথ ভ্যালু অ্যাড না করেই তাদের ওখানে রপ্তানি করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সাফটার রুল অনুযায়ী যৌথভাবে কারখানা পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে। তবে এই পরিদর্শনটি কীভাবে হবে সেটির প্রক্রিয়া বা মডালিটিজ নিয়ে কিছু বলা নেই সাফটায়। আমাদের দেশের কারখানা পরিদর্শনের আগে সেই মডালিটিজ চূড়ান্ত করতে হবে আগে। আমরা ভারতকে সেটি জানাব। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে সিইও ফোরাম গঠন বিষয়ে আলোচনা হবে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি ও সিইও পর্যায়ের ১০ জন করে নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের জুট ইয়ার্ন, জুট সেকি ব্যাগ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ বেশ কয়েকটি পণ্য রপ্তানিতে এন্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে ভারত। এটি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। বাংলাদেশের বোটল ফ্লেক্স আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। সেটিও প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া নতুন বর্ডার হাট স্থাপন, স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের ইস্যুগুলোও দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় উঠে আসবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর