চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার যুবক আবু নঈম। মাস ছয়েক আগে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে। ভিসা দালালের কথিত ‘ফ্রি ভিসা’র লোভে পড়ে দেখতে থাকেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয়ের স্বপ্ন। তাই পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জায়গা বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে সব স্বপ্ন হয়ে যায় বুমেরাং। যাওয়ার পর প্রথম কয়েক মাস ছিলেন বেকার। পরবর্তীতে নামমাত্র বেতনে কাজ করছেন একটি দোকানে। আবু নঈমের মতো অনেক বাংলাদেশি ‘ফ্রি ভিসা’য় সৌদি আরবে গিয়ে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। হচ্ছেন প্রতারিত। অনেকে থাকছেন মাসের পর মাস বেকার। আবার অনেক নির্ধারিত সেক্টরের বাইরে অন্য সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে সৌদি আরবের পুলিশের হাতে আটক হয়ে ফিরে আসছে দেশে।
সৌদি আরবের জেদ্দা কনস্যুলেটের শ্রম উইংয়ের দেওয়া তথ্য মতে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৌদি আরব কর্মক্ষেত্রে নিজেদের নাগরিক বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। তাই অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কঠোর হচ্ছে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের। আইন কঠোর বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে নিচ্ছে ব্যবস্থা। তাই ফ্রি ভিসায় যাওয়া শ্রমিকরা নির্ধারিত সেক্টরের বাইরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ জাঁতাকলে পড়ে প্রতিদিনই ফিরে আসছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। শুধু ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে প্রায় ২১ হাজার শ্রমিককে। জানা যায়, ২০১৭ সালে সৌদি নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ১২টি খাতে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন থেকে এক সেক্টরের ভিসা নিয়ে অন্য সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যায় সৌদি সরকার। এরপর থেকেই এক সেক্টরের ভিসা নিয়ে অন্য সেক্টরে কাজ করতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রায় দুই যুগ ধরে সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থান করছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন। তার মতে, আদতে সৌদি আরবে ‘ফ্রি ভিসা’ বলতে কিছু নেই। ‘ফ্রি ভিসা’য় সব সেক্টরে কাজ করতে পারবে এ কথাটি সম্পূর্ণ দালালদের তৈরি। ‘ফ্রি ভিসা’ নিয়ে এলে সব সেক্টরে কাজ করতে পারে না। ফ্রি ভিসা হলেও তাতে কোন সেক্টরে কাজ করতে পারবে তা উল্লেখ থাকে। ওই সেক্টরের বাইরে কাজ করলে সৌদি আরবের নতুন আইন অনুযায়ী তা অবৈধ। যেসব শ্রমিক এক সেক্টরের ভিসা নিয়ে অন্য সেক্টরে কাজ করে তাদের আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রতিনিয়তই এভাবে আইন ভঙ্গ করার কারণে অনেক বাংলাদেশি সৌদি পুলিশের হাতে আটক হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। দালালের প্রতারণার শিকার আরেক প্রবাসী জাফর উল্লাহ বলেন, ফ্রি ভিসা কেনার আগে মাসে লাখ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখায় দালাল। কিন্তু এসে দেখি এ ভিসায় কোথাও চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ভিসায় এলেও নিজেকেই চাকরি খুঁজে নিতে হয়।