সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও প্রণোদনা চান গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা

এক শতাংশ হারে দাবি করে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পোশাকশিল্প মালিকদের অনুরোধে কয়েকদিন আগেই নতুন করে ১ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা নামে, নানারকম প্রণোদনায় এই একটি খাতের জন্য সরকারকে এ বাবদ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দিতে হয়েছে। তবে তাতেও তৃপ্ত নন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। এবার তারা আরও এক শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে আবারও চিঠি পাঠিয়েছেন। এই প্রণোদনা চাইছেন তারা ইপিজেড, ইজেড-এ অবস্থিত ‘টাইপ-বি প্রতিষ্ঠান’ অর্থাৎ দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন পোশাক কারখানার জন্য।

সম্প্রতি যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এ জন্য অবশ্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক। গত ১১ জানুয়ারি পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিশেষ এই প্রণোদনা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে বর্তমানের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। উক্ত প্রণোদনা ইপিজেড ও ইজেড-এ অবস্থিত টাইপ-বি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হয়নি। ফলে যৌথ বিনিয়োগে (ফরেন+লোকাল) প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ১ শতাংশ নগদ সহায়তা হতে বঞ্চিত হবে।’

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট আরও জানান, টাইপ-বি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রযোজ্য না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বৈত নীতি বিবেচনা করে হতাশ হতে পারেন এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত বোধ করতে পারেন। এই চিঠি পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, প্রণোদনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করা, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায়  টিকে থাকার জন্য সুরক্ষা দেওয়া; এ জন্য গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে ইপিজেড ও ইজেডে অবস্থিত টাইপ সি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেশীয় কারখানাকে প্রণোদনা সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন যদি যৌথ মালিকানাধীন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদেরও প্রণোদনা দিতে হয়- তবে পোশাকশিল্প ব্যতীত ইপিজেড বা ইজেড-এ অন্য যেসব বিদেশি শিল্প রয়েছে তারাও বৈষম্যের যুক্তি দেখিয়ে প্রণোদনা দাবি করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইপিজেড ও ইজেডে অবস্থিত শিল্প-কারখানা এমনিতেই নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করছে। এখানে বিনিয়োগের শর্তই হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ইপিজেড বা ইজেড-এ জমি থেকে শুরু করে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব সেবা সরকার হ্রাসকৃত মূল্যে দিয়ে থাকে। সেখানে সরকারের বিনিয়োগের ৪০ শতাংশই এমন সব খাতে ব্যয় হয় যেগুলো থেকে কোনো আয় আসে না। ফলে তারা এমনিতেই প্রণোদনা পাচ্ছে। নতুন করে নগদ সহায়তার কোনো যৌক্তিক কারণ  দেখি না আমরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নগদ প্রণোদনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পোশাক খাতে নতুন করে ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে ইউরোপ, আমেরিকা এবং কানাডার মতো প্রচলিত ও পুরনো বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। অর্থ বিভাগের হিসাবে, নতুন করে এই সুবিধা দেওয়ায় শুধু তৈরি পোশাক খাতের নগদ প্রণোদনা বাবদই সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ শতাংশ যোগ হওয়ায় এ খাতে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৫ শতাংশ। এর ফলে সরকারের ব্যয় আরও এক দফা বাড়ছে। বর্তমানে পোশাক খাতে চার ধরনের নগদ প্রণোদনা  দেওয়া হয়ে থাকে। রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা বাবদ ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। বস্ত্র খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা (প্রচলিত নিয়মের) বাবদ ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা  দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইউরো জোনে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য (বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত) ২ শতাংশ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকার ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পোশাক খাতের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। এ জন্য চলতি বাজেটে নতুন পণ্য/নতুন বাজার (বস্ত্র খাত) সম্প্রসারণ সহায়তা বাবদও ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়। শর্ত ছিল এই নগদ সহায়তাটি তারাই পাবেন যারা আমেরিকা, কানাডা, ইইউ এর মতো প্রচলিত ও পুরনো বাজারের বাইরে নতুন বাজারে রপ্তানি করবেন। তবে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এটিকে বৈষম্যমূলক অভিহিত করে প্রচলিত ওই বাজার অর্থাৎ আমেরিকা, কানাডা এবং ইইউ-এ রপ্তানির জন্যও ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দাবি করেন। তাদের এই দাবি মেনে গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক আমেরিকা, কানাডা এবং ইইউতে রপ্তানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনার প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রণোদনা এখন ইপিজেডের যৌথ মালিকানাধীন পোশাক কারখানাগুলোকেও দিতে বলছে বিজিএমইএ।

সর্বশেষ খবর