বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নকল পুলিশ

মির্জা মেহেদী তমাল

নকল পুলিশ

চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশের পোশাকে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ৬৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি। তবে পুলিশি চেষ্টায় অপহরণকারীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি অপহৃত ব্যবসায়ী উদ্ধার হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে, এটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের ঈদগাহ এলাকায়। পুলিশ বলছে, ডিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে একটি চক্র। বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। রাজধানীর নতুনবাজারে চেকপোস্টে পুলিশ লেখা স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস দাঁড় করান বাড্ডা বিভাগের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। মাইক্রোবাসে বসা রফিকুল ইসলাম নিজেকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেন। রফিকুল ওই কর্মকর্তাকে পরিচয়পত্র দেখালে তার সন্দেহ হয়। এতে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে ফোন করলে জানতে পারেন, ওই নাম ও ব্যাচ নম্বরে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। তৎক্ষণাৎ রফিকুলকে আটক করা হয়। সঙ্গে পুলিশ লেখা রেইনকোর্ট, চাবিসহ একটি হ্যান্ডকাফ, চারটি পুলিশ আইডি কার্ডসহ অনেক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। রফিকুলের দাবি, তিনি আগে পুলিশে কর্মরত ছিলেন, প্রিজন ভ্যান চালাতেন। হয়তো চাকরি থাকাকালীন তিনি এসব জব্ধ করেছেন, না হয় চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সংগ্রহ করেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি পুলিশ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত শনিবার খুলনায় পুলিশ পরিচয়ে গ্রেফতারের কথা বলে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার সময় এক ভুয়া পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়। গত শনিবার ভোরে মহানগরীর রায়ের মহল মুন্সীপাড়া এলাকা থেকে প্রাইভেটকারসহ ভুয়া পুলিশ সোহেল মোল্যাকে আটক করা হয়। এ সময় ডুমুরিয়ার চুকনগরের অপহৃত ফোন ফ্যাক্স ও মুদি ব্যবসায়ী সেকান্দারকে মুখে টেপ লাগানো ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর জানায়, পুলিশি অভিযানে ভুয়া পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে পুলিশের পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের ভাষ্য, পুলিশের রেইনকোর্ট, হাতকড়া খোলাবাজারে পাওয়া যায়। সেখান থেকে দুর্বৃত্তরা কিনে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা করছে। অথচ খোলা বাজারে এসব বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তা উপেক্ষা করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব বিক্রি করছে। পুলিশ সদর দফতরের (লজিস্টিক বিভাগ) সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী, সরবরাহকারী ও বিক্রয়কারী ৫০ এর বেশি অনুমোদিত দোকান রয়েছে। এর বাইরেও অনেক দোকান রয়েছে যারা খুচরা সরঞ্জাম বিক্রি করে। রাজধানীর নয়াপল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তিন নম্বর গেটের বিপরীতে জেড আর টাওয়ার, জুরাইন, লালবাগ, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কচুক্ষেত এলাকার মার্কেটে প্রায় ৪৭টি দোকানে এসব সরঞ্জাম বিক্রি হয়। সম্প্রতি হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, বুলেটপ্রুফ হেলমেট ও স্প্রিং ছড়ি বিক্রি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও কোনো কোনো দোকানে এসব বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের এসব বিক্রির অনুমতি থাকলেও অবৈধভাবে বসানো হয়েছে আরও কিছু দোকান। সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা একটি দোকানের অনুমোদন নিয়ে একাধিক শাখা গড়ে তুলছেন। ওইসব অবৈধ দোকান থেকে পুলিশের পোশাকসহ সরঞ্জাম দুর্বৃত্তদের হাতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের কাছ থেকেও ডিবি জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, পিস্তল-গুলিসহ পুলিশের অনেক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পলওয়েল সুপার মার্কেটে সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশের পোশাক, লাইট ডিটেক্টর, ব্যাজ, বাঁশি, ক্যাপ, বেল্ট, জুতা, পিস্তল রাখার কভার, র‌্যাংকব্যাজ, নেমপ্লেট, লেন ইয়ার্ড, কনস্টেবল থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদমর্যাদার ক্যাপ, রিপ্লোটিং ব্রেস্ট, পুলিশ লেখা টর্চলাইট, পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ও জেলার ডিপ সাইনসহ প্রায় সব সরঞ্জামই বিক্রি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর