অনিয়ন্ত্রণ ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণের কারণে সাগরে সাত মৎস্য প্রজাতি নিঃশেষ হওয়ার পথে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট জোরদার করা না হলে অতি শিগগিরই এসব মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্ত হবে বঙ্গোপসাগর থেকে। তাই সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ নিয়েছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। সাগরে মৎস্য অনুসন্ধান জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’র অন্যতম গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ’ বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাগরে গত তিন বছর সুনির্দিষ্ট ১০ প্রজাতির মাছের ওপর গবেষণা চালানো হয়। ওই গবেষণায় সাত প্রজাতির মাছের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট জোরদার করা না হলে এ সাত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বঙ্গোপসাগর থেকে।’ তিনি যোগ করে বলেন, ‘ইলিশ মাছ রক্ষায় সরকার যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে ঠিক একই পদ্ধতি সাগরেও করা যেতে পারে। মাছ রক্ষায় ইলিশের পদ্ধতির চেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ এ মুহূর্তে আর দেখছি না।’ জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে নির্দিষ্ট স্থানে মাছের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে ২০১৬ সালে সাগরে নামানো হয় মৎস্য অনুসন্ধান জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’। এ জাহাজ সাগরের ১০ মিটার থেকে ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মহীসোপান এলাকায় জরিপ কার্যক্রম চালায়। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনবার করে বছরে মোট ৩০ দিন অনুসন্ধানে ছিল আর ভি মীন সন্ধান। গত তিন বছরে মোট ৯ বার সাগরে যায় এ অনুসন্ধান জাহাজ। এ গবেষক দল সাগরে গবেষণায় ব্যয় করে ৯০ দিন। অনুসন্ধানকালে ১০টি মৎস্য প্রজাতির ‘মজুদ’ জানতে সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ওপর ফোকাস করা হয়। এ সময় ১০ প্রজাতির মধ্যে ৭টির ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। যার মধ্যে- লাক্ষ্যা, পোয়া, রূপ চান্দা, লইট্টা, কাটা মাছ, ফলি চান্দা এবং হরিণা চিংড়ির অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এ সাত প্রজাতির মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে এক প্রকার নিঃশেষ হওয়ার পথে। বাকি তিন প্রজাতির মধ্যে সাদা পোয়া, মরিচা এবং কলম্বো রূপ চান্দার অবস্থা অন্য সাত প্রজাতির চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও তা নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কিছুই নেই। কারণ এ তিন প্রজাতিও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হওয়ার পথেই চলছে। গবেষকদের মতে- বঙ্গোপসাগর থেকে বর্তমানে ৬ লাখ টন বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরণ করা হয়। মৎস্য আহরণ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে তা চার থেকে সাড়ে চার লাখ টনের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে এক সময় মাছশূন্য হয়ে যাবে বঙ্গোপসাগর। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ১০টি প্রজাতির ওপর গবেষণা চালিয়ে সামান্য তথ্য পাওয়া গেছে। পুরো বঙ্গোপসাগরে এ গবেষণা চালালে আরও কঠিন পরিস্থিতি পাওয়া যাবে। সাগরকে রক্ষা করতে হলে সাগরে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ বন্ধ করতে হবে। প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং বাণিজ্যিক ট্রলার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মাছ রক্ষায় পুরো সাগরকে সুরক্ষিত করতে হবে তা কিন্তু নয়। কারণ পুরো সাগরেই মাছ বসবাস করে না। সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলেই সাগরের মৎস্য প্রজাতি রক্ষা করা সম্ভব হবে।