বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে দুই মেয়র প্রার্থী

পরিবেশবান্ধব স্মার্ট সিটি গড়ব : শাহাদাত

মাহমুদ আজহার ও মুহাম্মদ সেলিম

পরিবেশবান্ধব স্মার্ট সিটি গড়ব : শাহাদাত

পরিবেশবান্ধব স্মার্ট সিটি গড়তে সেবা করার সুযোগ চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। যানজট আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে। এসবের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সবাইকে নিয়ে বাস্তবায়ন। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে আমাকে সেবা করার সুযোগ দিলে চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তুলব। পরিবেশবান্ধব স্মার্ট ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তুলব।’ গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। একান্ত আলাপচারিতায় সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি ভোট নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় কিছুটা হতাশও হন ধানের শীষের এই প্রার্থী। সরকার ও ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটা আপনাদের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা সিটিতে ৬০ লাখ লোকের মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ লোকের দুই মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। ৮০ ভাগ লোকের মেয়র তাঁরা হতে পারেননি। জনগণের প্রতি এসব মেয়রের দায়বদ্ধতাও থাকে না। এজন্য দায়ী ইসি ও সরকার। এটা যেন চট্টগ্রামে না হয়। উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ চাই।’ চট্টগ্রাম মহানগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে কেন্দ্রে আসবেন। আমরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেব। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনাদের অধিকার প্রয়োগ করুন। আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। মোটামুটি সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সরকারের উদ্দেশে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যে নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে বিতর্কিত হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। গণমুখী, ভোটারদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর নির্বাচন যেন হয়। এটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারেরই উচিত হবে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। জনগণকে ভোটমুখী করাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ একাকার। তা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নৌকা প্রতীক মানেই যে বিজয় অবধারিত সে চিন্তাধারা থেকেও ইসিকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে। গোটা নির্বাচনকে যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের নিরপেক্ষ হতেই হবে।’ ইভিএমের কারিগরি বিষয়ে নানা ত্রুটির দিক তুলে ধরেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে যখন ভোট দেওয়া হয়, তখন অপারেটিং প্যানেলসহ ব্যালট প্যানেলও খুলে যায়। ব্যালট প্যানেলের কোনো সুরক্ষা থাকে না। এটা ইসিকে দিতে হবে। বুথের ভিতরে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে হবে। ইভিএমে যেহেতু রেকর্ডিং সিস্টেম নেই সেজন্য ভিভিপ্যাডের সংযোজন করতে হবে। ইভিএমের ব্যালট প্যানেলকে সুরক্ষা দিতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসারের ভোটের হার ৫ ভাগ না রেখে ১ ভাগ রাখা যেতে পারে। তাদের এখতিয়ারে ১ ভাগ রাখতে হবে। আগে থেকে বুথের মধ্যে নৌকার ক্যাডাররা উপস্থিত থাকবে, ভোটাররা নিজেদের পছন্দমতো ভোট দিতে পারবেন নাÑ তা হবে না। প্রতিটি দলের পোলিং এজেন্টদের যাতে বের করে দেওয়া না হয়, তার সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের।’ তিনি বলেন, ‘ইসি যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে ভোটাররাও উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আগের রাতে যেন সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রের আশপাশে বোমা ফাটিয়ে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি না করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে ধানের শীষের বিজয় অনিবার্য।’ বারবার পরাজিত হয়েও বিএনপি কেন ভোটেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগারে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে। জনগণের ভোটের অধিকারের লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব।’ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এখন কোন্দলমুক্ত ও শক্তিশালী দাবি করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘দলে এখন কোনো কোন্দল নেই। এখানে কে মনোনয়ন পেল, কে পেল না তা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। তাই নির্বাচনে সবাই জোটবদ্ধভাবে কাজ করবেন।’

চট্টগ্রাম সিটি ভোট বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অনেক বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। তাই যে কোনো নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি। বিগত সময়ে নির্বাচনগুলোয় নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত ভূমিকা রাখলেও আমরা মনে করি নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই গণতন্ত্র রক্ষা করতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হচ্ছে। এ নির্বাচন বিএনপির জন্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জনগণের জন্য। বিগত সময়ে যারা নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন তাদের কেউ জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেননি। নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর