মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
পরামর্শ

করোনায় আক্রান্ত মানেই ভয়ঙ্কর কিছু নয়

ডা. অধ্যাপক মেজর (অব.) মো. জুলহাস উদ্দিন

করোনা ইনফেকশন (COVID-19 ) একটি ভাইরাস সংক্রামক রোগ যেটি মানবদেহের শ্বাস-প্রণালি বিশেষ করে LRT (Lower Respiratory Tract) বা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। যার ফলে রোগী জ্বর, বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও কাশি অনুভব করে অর্থাৎ আমরা যেটাকে নিউমোনিয়া বলে থাকি। পক্ষান্তরে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস URT (Upper Respiratory Tract) নাক- গলাকে আক্রান্ত করে। ফলে হাঁচি, নাকঝরা, গলাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভব করে। উভয় প্রকার সংক্রমণই হাঁচি-কাশির (Droplet) মাধ্যমে ছড়ায় এবং দুটি একই প্রজাতিরই রোগ। সুপ্তকাল (Incubation Period) অর্থ হলো- জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময়কাল পর্যন্ত যা COVID-19 এবং Flu -এর ক্ষেত্রে ভিন্ন। করোনা LRT -কে আক্রান্ত করে বলে সর্বোচ্চ ১৪ দিন এবং ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা UR -কে আক্রান্ত করে বলে সর্বনিম্ন এক দিন বা দুই দিন। আর এর ওপর নির্ভর করেই করোনায় সঙ্গরোধ বা Quarantine ১৪ দিন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরোক্ত উপসর্গগুলোর সঙ্গে যদি সংস্পর্শ বা ঈড়হঃধপঃ এর ইতিহাস থাকে তবে আমরা তাকে Suspected COVID-19 রোগী হিসেবে বিবেচনা করি এবং উল্লিখিত সময়ের জন্য নিজ বাড়ি বা হাসপাতাল Quarantine বা সঙ্গরোধে পাঠাই। সুখের বিষয় হলো- এ পর্যন্ত ছঁধৎধহঃরহব দের মধ্য থেকে খুবই কম সংখ্যক রোগী আমাদের দেশে সংক্রমিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এবং এর মধ্যে অনেকেই উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও সুস্থ হয়ে সঙ্গরোধমুক্ত হয়েছেন।

এবার আসা যায় COVID-19 চিহ্নিতকরণ বা Confirmation Recommended Laboratory Tests যেমন : ১। RT-PCR এবং ২। Serological (1gG, 1gM) Tests শুধু Suspected রোগীদের ওপর। RT-PCR অর্থাৎ সরাসরি জীবাণু-নির্ণয়কারী পরীক্ষা যা প্রথম দিন থেকেই পরীক্ষার জন্য নাক ও গলা থেকে Sample নেওয়া যায় যদিও রিপোর্ট পেতে দুই-তিন দিন সময় লাগে এবং পজিটিভ হলেই আমরা তাকে COVID-19  এ আক্রান্ত বলি। এখন সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ দেখা না দিলেও পজিটিভ হতে পারে। আর যদি হয়েও যায় তবে এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক Antibody রক্তে তৈরি হতে শুরু করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি হওয়া Antibody (1gG, 1gM)) জীবাণু শরীরে প্রবেশের সপ্তাহখানেক পর থেকেই দেখা দিতে শুরু করে, যা সারা জীবনই ওই সংশ্লিষ্ট রোগীকে Defence দিতেই থাকবে। আমরা এও জানি যে, চিকিৎসাশাস্ত্রে যখন এন্টিবায়োটিক ছিল না তখন সুস্থ হওয়া রোগীর থেকে এ ধরনের Protective Antibody সমৃদ্ধ রক্ত নিয়ে চিকিৎসা করা হতো। বর্তমান করোনা ক্রাইসিসের সময় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সুস্থ হওয়া রোগীর Immune-Plasma দিয়ে চিকিৎসা প্রদানের কথা ভাবছে। সুতরাং করোনা প্রতিরোধে অসংখ্য গণমাধ্যম ও গণসংযোগের মাধ্যমে জনসচেতনতা থেকে শুরু করে সরকারের মানবিক প্রচেষ্টায় কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও রোগের Natural History সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানের প্রসার ঘটানো এবং সর্বোপরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদিকে সামনে রেখে আমরা বলতেই পারি যে, করোনায় আক্রান্ত মানেই ভয়ঙ্কর কিছু নয়। সর্বশেষ চীনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনা উৎপত্তিস্থল উহানে প্রথম দিকে আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত ঠা-া ও স্যাঁতসেঁতে ছিল। অর্থাৎ বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়াতে পারলে এর সংক্রমণ কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব ছিল। সেদিক থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের তথা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য বাংলাদেশের বর্তমান অপেক্ষাকৃত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক হবে। অতএব অহেতুক ভীতিকর অবস্থায় না থেকে নিজের ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে থেকে মিলেমিশে ইবাদত-বন্দেগি করে দিনাতিপাত করুন। লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মার্কস মেডিকেল কলেজ, মিরপুর-১৪, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর