বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

একযোগে কাজ করতে হবে

------ হাসানুল হক ইনু

একযোগে কাজ করতে হবে

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় গাফিলতি ও প্রস্তুতিহীনতা নিয়ে কাউকে দোষারোপ না করে ঘাটতি মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এখন দোষ খুঁজে বের করা, দায়িত্ব এড়ানো, বেশি কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা বলার সময় নয়। একসঙ্গে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার সময়।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার ভাবনা কী- জানতে চাইলে সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি এসব কথা বলেন। হাসানুল হক বলেন, করোনার সামাজিক সংক্রমণের সংখ্যা, মাত্রা, পরিমাণ, পরিধি বাড়ছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। লকডাউনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ক্লাস্টার, এলাকাগুলোতে সামাজিক নজরদারির মাধ্যমে লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে সম্ভাব্য রোগীদের চিহ্নিত করে তাদের টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে, সংক্রমিতদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক নজরদারির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিফোন ব্যবহার করে যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পাড়া-মহল্লা এলাকাভিত্তিক প্রতিবেশী কমিটি ও সামাজিক কমিটি গড়ে তুলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও হটলাইনগুলোর মাধ্যমে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রাখতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার বা প্রতিবেশীদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে নিষ্ঠুরতা না দেখিয়ে যতটা সম্ভব তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। সামাজিক নিষ্ঠুরতার ভয়ে অনেক ব্যক্তি করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ থাকার পরও তা লুকিয়ে রাখছেন। কেউই যেন রোগ না লুকান এ অভয় সবাইকে দিতে হবে। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিএনসিসি, স্কাউট, আনসার, গ্রামপুলিশ ও উৎসাহী যুবসমাজকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে। জাসদ সভাপতি বলেন, সরকারের হটলাইন নম্বরগুলোর সাড়া দেওয়াকে আরও কার্যকর করতে হবে। লকডাউন পরিস্থিতিতে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও ড্রাইভার এবং সব প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এলাকাভিত্তিক অ্যাম্বুলেন্স পুল গড়ে তুলতে হবে।

সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় যে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার অকার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যে কথা উঠেছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, দক্ষ-অভিজ্ঞ-যোগ্য-সক্রিয় দায়িত্বশীলদের নিয়ে জাতীয় কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, সংক্রমণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ, শ্বাসতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, আইসিইউ ও সংকটাপন্ন রোগী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি চিকিৎসা বোর্ড ও মনিটরিং টিম গঠন করে তাদের নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তাদের নেতৃত্বে অনলাইনে সারা দেশের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

 প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে সংসদ টিভি বা বিটিভি ওয়ার্ল্ড বা প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে। হাসানুল হক ইনু বলেন, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম কাতারের যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বাড়ানো ও মানসিকভাবে তাদের উজ্জীবিত রাখা, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করা দরকার তার সব ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, করোনার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে তাদেরই থাকতে হয় এবং তারাই সরাসরি করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেন। ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়া ও করোনা সংক্রমণ বিস্তারের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই কর্তব্য পালনকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাসপাতালের কাছে থাকার জন্য হোটেলগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যাতে বিরতিহীন কাজ করে অসুস্থ হয়ে না পড়েন তার জন্য তাদের গ্রুপ ভাগ করে ডিউটি রোটেশন করতে হবে। হাসপাতালগুলোয় দায়িত্ব পালনকারীদের নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতে হবে। জাসদ সভাপতি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের লোকবল সংকট মোকাবিলায় ইন্টার্নি চিকিৎসক, মেডিকেল ছাত্রছাত্রী, নার্সিং ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত আর্থিক তালিকা ঘোষণা করা দরকার। কর্মহীন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্টদের অ্যাডহক ভিত্তিতে জরুরি নিয়োগ দেওয়া দরকার। প্রথম সারির এসব করোনা যোদ্ধার জন্য ঝুঁকিবিমার পাশাপাশি তাদের প্রণোদনা ও ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের জরুরি চাহিদা মেটাতে অবিলম্বে বড় ধরনের থোক বরাদ্দ দিতে হবে এবং দ্রুত বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহ করতে হবে। পিপিই, মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, কিটস, মেশিনপত্র, যন্ত্রপাতি, আইসিইউ বেড, ভেনটিলেটর সংগ্রহ করতে হবে। ল্যাবের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবগুলোয় টেস্ট চালু করতে হবে।

জাসদ সভাপতি বলেন, করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কারাগার, বস্তি এলাকা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকার জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর