রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১৮ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল ছয়জন রোগী মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলে করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল মোট ১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুরে পাঁচজনসহ জামালপুর, ঝিনাইদহ, খুলনা, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোরে তাদের মৃত্যু হয়। তবে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাদের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল ছয়জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। গত  শুক্রবার রাত ৯টা থেকে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারা হলেন- ঢাকার মোকাম্মেল হোসেন (৭২), মো. আমিনুর রহমান (৫৬), আশরাফুল (৩২), গাজীপুরের হামিদ (৭৫), শরীয়তপুরের আসমা (২৪) ও নারায়ণগঞ্জের রন্জিত (৪১)।

বিভিন্ন জেলায় মৃত্যু ১২ জনের : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুর শহরের ট্রাকরোডে ছকিনা বেগম (৮০) নামে নারীর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু সড়কের আমজাদ খান বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান সাহিদা বেগম (৪৫)। শুক্রবার রাতে উপসর্গ নিয়ে ট্রাকরোড কাজী অফিস সংলগ্ন এলাকায় আবুল খায়ের মিজি (৫২) মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত ৩টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক আবুল হাসনাত খান (৫৫)। তিনি দৈনিক সমাচার পত্রিকার ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। মৃত্যুর ঘণ্টাখানিক আগে রাত দেড়টার দিকে সাংবাদিক আবুল হাসনাত তার ফেসবুকে পোস্ট দেন, ‘আমার অবস্থা ভালো না। আমাকে সবাই মাফ করে দেবেন। আমার সন্তানদের একটু দেখবেন।’ এই পোস্টের পর স্থানীয় একজন সাংবাদিক ও হাসনাতের পরিবারের সদস্যরা তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ছাড়া কচুয়ায় গতকাল সকালে ফজিলাতুন নেছা (৬৫) নামের এক নারী মারা যান। শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে, অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা আনার পথে দাউদকান্দি এলাকায় তিনি মারা যান। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, করোনা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা না নিয়ে যদি কেউ বাড়িতেই থাকেন, সেটা খুবই দুঃখজনক। কারণ আমরা তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগও পাচ্ছি না। তারা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে এলে মৃত্যুবরণ করছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।

জামালপুরের বকশীগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার নামাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে ১৮ বছর বয়সী ওই পোশাক শ্রমিক মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করত। বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রতাপ নন্দী জানান, গত বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে নামাপাড়া গ্রামের ওই ব্যক্তি বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসে। এ সময় করোনা সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তাকে জামালপুরে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু তিনি জামালপুরে না গিয়ে তার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করেন। পরে শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ওই পরিবারের ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গে জসিম উদ্দিন নামে একজন মারা গেছেন। তিনি সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের শওকত আলির ছেলে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আইয়ুব আলি জানান, ২৭ মে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জসিম উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার আগেই শনিবার সকালে তিনি মারা যান। খুলনায় করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আশরাফুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল পরিচালক ডা. মুন্সী রেজা সেকেন্দার জানান, জ্বর, সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্ট নিয়ে আশরাফুর রহমান গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা গেছেন।

করোনা উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মমতাজ আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের বাসীন্দা। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির (৩৩) মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এরপর তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরায় জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কৃষকের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মানস মন্ডল বলেন, সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এলাকার এক কৃষক জ্বার ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুরে হাসপাতালে আসেন। তাকে ভর্তি করে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) হস্তান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। জানা গেছে, ভর্তির পরে তার করোনা সংক্রমণ আছে কিনা জানতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার আগেই তিনি মারা যান। নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুমা বেগম (২২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়। তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলার সাতশৈল গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমা বেগমকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এ ছাড়া তিনি ডায়াবেটিস রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রোগীর স্বজনেরা রাজশাহী নিয়ে যেতে অপারগতা জানান। পরে তাকে সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর