মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় একজন, বরিশালে তিনজন, ফেনীতে দুজন, সিলেটে দুজন, চট্টগ্রামে দুজন ও নীলফামারী, গাইবান্ধা, রাঙামাটি, বগুড়ায় একজন করে মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সহকারী লাইব্রেরিয়ানের মৃত্যু : করোনা উপসর্গ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. আসাদুজ্জামান মারা গেছেন। পরে সমিতির কাজে ব্যবহৃত অফিস কক্ষটি আগামী এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান সর্বশেষ গত ২০ মে অফিস করেছিলেন। তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যুর ঘটনা জানার পর আমরা শুধু সেই অফিস কক্ষটি আগামী এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছি। তবে বার ভবন লকডাউনের কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারবেন। এর আগে গতকাল দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. আসাদুজ্জামান করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জেলায় জেলায় ১৩ জনের মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী-  বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আধা ঘণ্টার মধ্যে ৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল বিকাল ৩টা ১ মিনিট থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে মারা যায় তারা। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, গত রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর আলেকান্দা কাজীপাড়ার এক ব্যক্তি (৭৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। গতকাল বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি। একই দিন বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হারিপালা এলাকার ৫০ বছর বয়সের এক পুরুষ রোগীকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে ৫ মিনিট পর বিকাল সাড়ে ৩টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল এলাকার এক ব্যক্তিকে (৬৫) গতকাল দুপুর দেড়টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে, বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ফেনীতে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া জ্বর কাশি শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোনাগাজীতে ৫৫ বছর বয়সী আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জ্বর-কাশি শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের এক নারীকে রবিবার বিকালে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাতে হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ওই ব্যক্তি জ্বর-কাশি শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। সিলেটে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে ও রাতে ওই দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের একজনের বয়স ৭৮ বছর ও অপরজনের বয়স ৫৫ বছর।

জানা গেছে, মারা যাওয়া দুজন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দুই দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের হালকা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এর মধ্যে একজনের হৃদরোগও ছিল। অপরজনের বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল।

চট্টগ্রামে পুলিশের মৃত্যু : করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। কনস্টেবল মামুন উদ্দিন (২৮) সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) শাখায় কর্মরত ছিলেন। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় মৃত্যুর পর মামুনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি আক্রান্ত ছিলেন কিনা।

হাসপাতাল কর্মীর মৃত্যু : চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬০ বছর বয়সী কর্মচারী হাসিনা বেগম করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকালে হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে মারা যান তিনি। ওই নারী জেনারেল হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে ক্লিনার হিসেবে চাকরি করতেন। জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব বলেন, হাসিনা বেগম আগে থেকে অ্যাজমায় ভুগছিলেন। গত রবিবার করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রাখা হয়। গতকাল সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউ ওয়ার্ডে মৃত্যুবরণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আউটসোর্সিং কর্মচারী হাসিনা হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছিলেন। তবে দুঃখজনক কথা হলো গত ৫ মাস ধরে তিনি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তার মতো আরও ৩৫ জন বর্তমানে পালাক্রমে করোনা ওয়ার্ডে সরাসরি কাজ করছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সাঈদ হোসেন (৩০) নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে শহরের নয়াটোলা মহল্লার নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলিমুল বাশার জানান, জ্বর-সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ২৮ মে তার নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুরের এম এ রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার বিকালে মারা যান তিনি।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুমন মোহন্ত (২৭) নামে এক যুবককে করোনা উপসর্গে অসুস্থ অবস্থায় সিলেট থেকে গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ি পৌঁছার আগেই পথিমধ্যে সিরাজগঞ্জ এলাকায় মাইক্রোবাসের মধ্যে গতকাল বেলা সাড়ে দশটার দিকে তার মৃত্যু হয়। সুমন মোহন্তের বাবা আনন্দমোহন বলেন, সুমন গত চার বছর থেকে সিলেটে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছিলেন। গত তিন দিন আগে সুমন প্রচন্ড গলাব্যথা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে খবর পেয়ে গত ৩১  মে সুমনের স্ত্রী ও তিনি (আনন্দমোহন) সিলেট যান। সেখান থেকে অসুস্থ সুমনকে নিয়ে ৩১ মে রাতে মাইক্রোবাসযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু গতকাল সকাল সাড়ে দশটার দিকে সিরাজগঞ্জ এলাকায় মাইক্রোটি পৌঁছলে সেখানে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়।

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৯ বছরের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা গেছেন। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারী রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে  মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে মারা যান। গতকাল তার গ্রামের বাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, ওই নারীর বাবার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায়। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে বাবার বাড়িতে ফিরে জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। তাকে প্রথমে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ দিনের মাথায় অবস্থার অবনতি ঘটলে রবিবার রাতে তাকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তিনি মারা যান।

রাঙামাটিতে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা এক স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ২৬ বছর বয়সী যুবকের বাড়ি উপজেলার ২ নম্বর রাইখালী ইউনিয়নের পূর্ব কোদালা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর