বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

করোনার প্রভাব নিয়ে ডব্লিউটিওর সতর্কবার্তা, পেছাতে পারে এলডিসি থেকে উত্তরণ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশসহ আরও যেসব রাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের অপেক্ষায় আছে, সেই উত্তরণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে। সংস্থাটি স্পষ্ট করেই বলেছে, করোনার কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

‘ট্রেড ইমপ্যাক্ট অব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি সরকারের কাছে পাঠিয়েছে ডব্লিউটিও। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখছে। আজ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হওয়ারও কথা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এলডিসি থেকে আমাদের গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়ে তারা (ডব্লিউটিও) কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছে। আমরা এখন সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি।’ ২০১৮ সালে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) জানায়, মানবসম্পদ সূচক, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মাথাপিছু আয়- এই তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের এই তিনটি সূচকে বাংলাদেশের অর্জনগুলো পরপর ছয় বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেই এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে।

তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ায় এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে মেরুকরণ ঘটছে তার প্রভাবে এলডিসিগুলোর উত্তরণ প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে ডব্লিউটিও। বাংলাদেশের মতো যেসব রাষ্ট্রের রপ্তানি ঝুড়ি মূলত তৈরি পোশাকের মতো একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য এলডিসির চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় এবং রপ্তানি আয়ও বেশি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের সম্পৃক্ততা বেশি। এ কারণে অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশের ঝুঁকিও বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃণ করার জন্য অন্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের অন্যতম গন্তব্য হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। করোনায় ওই অঞ্চলের বাণিজ্য ব্যাপকভাবে সংকুচিত হওয়ায় এটি সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও মানবসম্পদ সূচকে আঘাত করবে বলে মনে করছে ডব্লিউটিও। উপরন্তু দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাও এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে মানবসম্পদ সূচকের অগ্রগতির বিষয়টি সম্পৃক্ত। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতির রেশ কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন না করেই বাংলাদেশ যদি এলডিসি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আসবে গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। এলডিসি হিসেবে এখন উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশ যে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে, সেটি বাতিল হয়ে যাবে। এতে করে দেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত আরও বিপর্যয়ে পড়বে। এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে আমাদের ২০২৪ সালে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আরও তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এলডিসি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ চলমান প্রক্রিয়া অনুযায়ী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলেও উন্নত দেশগুলোতে ২০২৭ সাল পর্যন্ত কোটা ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বা জিএসপি পাবে বাংলাদেশ। এখন আমাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে, করোনার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে যে সর্বব্যাপী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা দিয়ে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব কি না। সেটি না হলে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন প্রক্রিয়া পিছিয়েও যেতে পারে।’

সর্বশেষ খবর