সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

একযুগ পর আলোচনায় ইপিবির রপ্তানি তহবিল

আকার হতে পারে ৫০০ কোটি টাকা, অগ্রাধিকার পেতে পারে অপ্রচলিত খাত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) একটি তহবিল ছিল ‘এক্সপোর্ট প্রমোশন ফান্ড’ (ইপিএফ) নামে, যেখান থেকে অপ্রচলিত খাতকে সহায়তা করা হতো। করোনা সংকটে বিপর্যস্ত দেশের রপ্তানি খাতকে চাঙ্গা করতে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর এখন সেই ‘তহবিল’টি কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। জনতা ব্যাংকে জমা থাকা এই তহবিলের আকার বর্তমানে ২১ কোটি টাকা। এটি বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার বিষয়ে প্রস্তাব উঠেছে ইপিবির এক অভ্যন্তরীণ সভায়। আর আগে যেখানে দুটি খাতে এই তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হতো, এখন সেটি বাড়িয়ে অপ্রচলিত খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানিতে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সেই তহবিল থেকে তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) খাত এবং হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য রপ্তানির বিপরীতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দেওয়া হতো। সুদের হার ছিল ৭ শতাংশ। তবে ২০০৮ সাল থেকে ওই তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ‘কভিড-১৯’-এর কারণে দেশের রপ্তানি খাতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় এখন ওই তহবিলটি কার্যকর করা যেতে পারে বলে মনে করছে ইপিবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে বিশ্বে নতুন নতুন পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। প্রচলিত তৈরি পোশাকের বাইরেও দেশের অপ্রচলিত খাতে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই তহবিলটির আকার বাড়িয়ে সেসব অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি করোনার কারণে যেসব রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাদেরও এই তহবিল থেকে সহায়তা করা যেতে পারে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইপিবির যে অভ্যন্তরীণ সভা ছিল, সেখানে এই তহবিল কার্যকর করার বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। এটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু এখনো হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও প্রস্তাব যায়নি। সূত্র জানায়, ‘বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব নিরূপণ এবং তা কাটিয়ে ওঠার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইপিবির মহাপরিচালক-২ মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে গত মে মাসে একটি সভা হয়। ওই সভায় এই তহবিলটি কার্যকর করার লক্ষ্যে যে সুপারিশ ছিল, সেগুলো হলো : (১) ইপিএফের আকার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীতকরণের লক্ষ্যে এককালীন থোক বরাদ্দের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; (২) ইপিএফ থেকে আগে দুটি খাতে (আইটি, হ্যান্ডিক্রাফটস) সহায়তা দেওয়া হতো, এখন সময়ের প্রয়োজনে নতুন নতুন খাত যুক্ত করা এবং আওতা বাড়ানো; (৩) রপ্তানিকারকদের ঋণ প্রদানে অপ্রচলিত খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া; (৪) এই তহবিলের সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের কার্যক্রম গ্রহণ; এবং (৫) এই খাত থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ গ্রহণের শর্তাবলি পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করা। ইপিবির কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি খাতে সহায়তার জন্য ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (ইডিএফ) নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তহবিল আছে। সেই তহবিল থেকে তৈরি পোশাকসহ দেশের উদ্যোক্তারা অর্ডার পাওয়ার পর কাঁচামাল আমদানি বা এলসির বিপরীতে ঋণ সুবিধা পায়। কিন্তু ইপিবির ‘এক্সপোর্ট প্রমোশন ফান্ড’ নামে তহবিলটি ছিল ছোট ছোট উদ্যোক্তা, যারা পণ্য রপ্তানির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না, তাদের সহায়তার জন্য। দুই দশক আগে যখন বিশ্বব্যাপী আইটি খাতের সম্ভাবনা তৈরি হলো, তখন সেই খাতের সঙ্গে দেশের হ্যান্ডিক্রাফটকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই তহবিলটি অনেকটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ)-এর মতো ছিল। ছোট কারখানা স্থাপন বা পণ্য উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তার মূলধনের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হতো। এই ঋণ প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হতো রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি উদ্যোগে ঋণ দেওয়ার পর দেখা যায়, সেগুলো আর চলছে না। কয়েকটি উদ্যোগ মার খেয়ে যায়, ফলে ঋণ আদায় নিয়ে সংকট তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালে তহবিলটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তবে কভিড-১৯ এর কারণে এখন দেশের রপ্তানি খাতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তাতে করে সেই তহবিলটির আকার বাড়িয়ে এখন দেশের অপ্রচলিত যেসব খাত রয়েছে, সেসব খাতের বিকাশে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি যেসব পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কম, কিন্তু করোনা-পরবর্তী বিশ্বে সম্ভাবনা রয়েছে- রপ্তানিমুখী এমন শিল্পের বিকাশেও এই তহবিলটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর