মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় শায়িত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল দুপুর ১টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে মাহবুবে আলমকে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে প্রায় পঞ্চাশ বছরের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী সহকর্মী, বন্ধু-স্বজন, শুভানুধ্যায়ীসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত হন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের ফুলেল শ্রদ্ধায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। গত ৪ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর তার পরিবার জানিয়েছিল, করোনামুক্ত হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ও হৃদরোগের ধাক্কা নিতে পারেননি প্রবীণ এই আইনজীবী। গতকাল তার জানাজার আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল আদালতে নিয়মিত বিচারকাজ শুরু হলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ব্যথিত। অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ আদালত বসছে না।’ এরপর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাহবুবে আলমকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা পৌনে ১১টায় বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে মাহবুবে আলমের মরদেহ এসে পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। নানা প্রস্তুতি শেষে কয়েক সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব আবু সালেহ মো. সলিমুল্লাহ। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল উপস্থিত থেকে জানাজার কার্যক্রম তদারকি করেন। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সমবেতদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মাহবুবে আলম নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে গেছেন আইন পেশা ও আইনজীবীদের প্রতি দায়বদ্ধতা রক্ষার জন্য। সেই দায়বদ্ধতা রক্ষা করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল করে থাকেন, তবে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যদি কারও কোনো ধরনের পাওনা থেকে থাকে তাহলে তার (মাহবুবে আলমের) কন্যা আইনজীবী শিশির কণা অথবা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পরে মাহবুবে আলমের ছেলে সুমন মাহবুব কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কোনোভাবে যদি আমার বাবার দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমার বোন আইনজীবী সমিতির সদস্য, তার প্রতি আপনারা খেয়াল রাখবেন। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় মাহবুবে আলমের কফিনে। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ফুলেল শ্রদ্ধায় বিদায় জানান মাহবুবে আলমকে।

প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবে আলমের আদর্শেই তরুণ আইনজীবীরা পেশাদারী হয়ে উঠবেন। তার আদর্শ আইনজীবীদের পথ দেখাবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মাহবুবে আলমের আদর্শ ও পেশাদারিত্ব অনুসরণীয়। আইন পেশায়, আইনজীবীদের মধ্যে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সর্বশেষ খবর