বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও ১২ বছর এলডিসি সুবিধা চায় বাংলাদেশ

করোনার প্রভাব বাণিজ্যে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর যাতে আরও ১২ বছর জিএসপি এবং মেধাস্বত্ব সুবিধা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়, সেই আবেদন জানিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর কাছে দুটি চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।

ওই দুই চিঠির একটিতে উন্নত দেশগুলোতে প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে, অপরটিতে সেবা খাত ও ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্বের যে মেয়াদ আছে, সেটি পূর্ণ মেয়াদে ভোগ করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে। দুই চিঠিতেই এসব সুবিধা এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় থেকে পরবর্তী ১২ বছরের জন্য দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জেনারেল কাউন্সিলে এই চিঠি দুটি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে ২০১৮ সালে। ওই সময় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) জানিয়েছিল, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বিবেচ্য- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে তা ছয় বছর (বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত) ধরে রাখতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিডিপি তিন বছর অন্তর এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। ওই কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে ২০২১ সালে। তার আগে স্বল্পোন্নত দেশের উত্তরণের এ প্রক্রিয়া নিয়ে চলতি মাসের ১৬-১৭ তারিখে ডব্লিওটিও’র জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে যাতে বাংলাদেশের সুপারিশগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়, সে লক্ষ্যে চিঠি দুটো পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে যে সুবিধা চাওয়া হয়েছে : (১) উন্নত দেশগুলোতে প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা ২০২৪ সালের পর আরও ১২ বছর অব্যাহত রাখতে হবে; (২) সাধারণ খাতে মেধাস্বত্ব সুবিধা (জেনারেল ট্রিপস)-এর মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ আরও ১২ বছর বাড়াতে হবে; (৩) সেবা খাতে ও ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্ব সুবিধা পূর্ণমেয়াদে ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে; এবং (৪) এলডিসি সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি উত্তরণের পর উন্নয়নশীল দেশের সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চিঠিতে জিএসপি বলতে উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক কোটামুক্ত বাজার সুবিধা এবং মেধাস্বত্ব বলতে ওষুধসহ সাধারণ পণ্য ও সেবা খাতে পেটেন্ট ও কপিরাইট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত  রাখার কথা বোঝানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিওটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় ধরে আমরা বলেছি, কভিড-১৯ অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি করেছে, সেটির পরও এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। কারণ করোনার যে প্রভাব সেটি শুল্ক সুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে এই উত্তরণ প্রক্রিয়াটি যাতে টেকসই হয়, সে জন্য আরও ১২ বছরের জন্য এলডিসির প্রাপ্ত সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মেধাস্বত্ব সুবিধা ২০৩০ সাল এবং ওষুধ শিল্পের জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও যাতে বাংলাদেশ এলডিসির ন্যায় এই দুটি সুবিধা পূর্ণমেয়াদে (২০৩০ ও ২০৩৩ সাল) ভোগ করে চিঠিতে সেই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এলডিসি সুবিধার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের সুবিধাগুলোও যাতে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়, সেই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলো কৃষি খাতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিতে পারে। এলডিসির জন্য কৃষি ভর্তুকির হার ৫ শতাংশ। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশ থেকে কোনো একটি পণ্য একটি নির্দিষ্ট দেশে রপ্তানির পরিমাণ যদি ৩ শতাংশের নিচে হয়, ডব্লিউটিওর নীতি অনুযায়ী ওই পণ্যের ওপর কোনো সেফগার্ড মেজার্স বা এন্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করা যায় না। কর্মকর্তারা জানান, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের টেক্সটাইল পণ্যে সেফগার্ড ডিউটি আরোপ করেছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর যদি দেখা যায়, বাংলাদেশের বস্ত্র খাতে যে পরিমাণ পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে, ইন্দোনেশিয়ায় ওই পণ্যটির রপ্তানির পরিমাণ তার ৩ শতাংশের কম, তবে দেশটির আরোপিত সেফগার্ড ডিউটি বাতিল হয়ে যাবে। ফলে এ ধরনের সুবিধা বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিওটিওর কাছে পাঠানো চিঠিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর