বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শৈলকুপার নান্দনিক গাছবাড়ি

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

শৈলকুপার নান্দনিক গাছবাড়ি

শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে দোতলাবিশিষ্ট গাছবাড়ি। বাড়িটির সব কটি দেয়াল গাছ দিয়ে মোড়ানো। ছাদেও আছে বড় বড় আম-কাঁঠালের গাছ। সামনের দিকে বিশাল আঙিনায় মূল্যবান দুর্লভ সব গাছ। রাস্তার পাশ দিয়ে লাগানো হয়েছে বনজ গাছ। বাড়ির সেপটিক ট্যাংকটিও গাছ দিয়ে সাজানো। কেটে-ছেঁটে নান্দনিক করে তোলা হয়েছে ফুল-ফলের গাছগুলো। যা সবার নজর কেড়েছে। বাড়িটির নাম হয়েছে ‘গাছবাড়ি’। শখের বশে বাড়িটি করেছেন ওই গ্রামের মৃত গোলাম কওছার আলীর ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের শৈলকুপার চাঁদপুর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লক্ষণদিয়া গ্রাম। এ গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের প্রথম বাড়িটিই গাছবাড়ি।

লক্ষণদিয়া গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি গোটা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখালেন আর জানালেন বাড়িটি তৈরির ইতিকথা। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। গ্রামের নারীদের দিয়ে সূচিশিল্পের (কাপড়ে নকশা তোলার) কাজ করান। প্রথমে নিজ গ্রামের নারীদের দিয়ে কাজটি করালেও বর্তমানে পাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে এ কাজগুলো করতে গিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি ভবন নির্মাণ করান। কিন্তু নারীরা এখানে বসতে চান না, নিজেদের ঘরে কাজ নিয়ে যান আবার কাজ শেষে তৈরি পণ্য দিয়ে যান। এতে বাড়িটি অনেকটা অকেজো হয়ে যায়। আর তখনই সিদ্ধান্ত নেন এ বাড়িতে গাছের সংগ্রহশালা তৈরির। ১৪ বিঘা জমির ওপর এ গাছের সংগ্রহশালা। দেশ-বিদেশ থেকে গাছ আনেন। এরপর এ সংগ্রহশালায় লাগিয়ে বড় করে তেলেন। বেলজিয়াম, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া, ভারত, দুবাইসহ একাধিক দেশ থেকে গাছ এনেছেন। এ সংগ্রহশালায় নানা প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতি মাসেই গাছের সংখ্যা বাড়ছে। গাছবাড়িতে রিটা, নাগলিঙ্গম, অ্যামাজিন, লিলির মতো মূল্যবান গাছ রয়েছে। রয়েছে দেশীয় ষড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ। যে গাছগুলো জঙ্গলে হয়, তা এ বাড়িতে লাগিয়ে সুন্দর করে রেখেছেন। এ ছাড়া বাড়িটির দেয়াল ‘ওয়াল কার্পেট’ নামের গাছ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। গোটা বাড়ির চারপাশে ৫০০ চারা রোপণ করা হয়েছে; যা গোটা দেয়াল ঘিরে রেখেছে। সেপটিক ট্যাংকটাও গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক গাছ লাগিয়েছেন। সবকিছুর সংগ্রহশালা আছে গাছের থাকবে না কেন- এ চিন্তা থেকেই গাছের সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়রা বাড়িটিকে গাছবাড়ি নাম দিয়েছেন।

গাছবাড়িটি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, এটা খুবই একটা ভালো উদ্যোগ। বাড়িটি আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এ বাড়িটি দেখে ও চারপাশে ঘুরে মনে হচ্ছে বাড়িটির চারদিকে বিরাজ করছে দূষণমুক্ত বাতাস।

কৃষিশ্রমিক জিন্না আলম জানান, গাছগুলো স্যারের জীবন। তিনি এগুলো সন্তানের মতো মানুষ করেন। এ গাছের মধ্যে থেকে আমরাও এগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছি। এ বাড়িটি দেখার জন্য দর্শনার্থী যারা আসেন মালিকের নির্দেশ আছে প্রধান ফটক খুলে দেওয়ার। তারা এসে ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং ছবি তোলেন। বর্তমানে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর ভিড়ে গাছ পরিচর্যায় বিঘ্ন ঘটছে। তাই শুক্র ও শনিবার বেলা ৩টার পর গাছবাড়িটি ঘুরে দেখার নিয়ম করা হয়েছে। তবে মূল ভবনটি বন্ধ থাকে। কারণ এখান থেকে কোনো কিছু বিক্রি হয় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর