মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী রাস্তায় সামরিক সাঁজোয়া যান নামিয়েছে। কোথাও কোথাও তারা গুলিও চালিয়েছে। তবে এতে বিক্ষোভ থামেনি, বরং এখন রাতের কারফিউ ভেঙেও মানুষ রাজপথ দখলে রাখা শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে রেলসহ বেসামরিক পরিবহন, অফিস, কল-কারখানা বন্ধ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
এক খবরে জানা গেছে, কোচির রাজধানী মিতকিনা নগরীতে একটি পাওয়ার প্লান্টের দখল নিতে সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালায়। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সংবাদ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দেশটির বড় বড় নগরীর রাজপথে সাঁজোয়া যান টহল দিচ্ছে। গণবিক্ষোভ দমনে গত শনিবার রাত থেকে সামরিক জান্তা আমলের একটি আইন পুনরায় জারি করা হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, রাতে কারফিউ জারি থাকছে। নিরাপত্তা বাহিনী আদালতের অনুমতি ছাড়াই যে কোনো বাড়িতে ঢুকতে এবং যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেফতার করতে পারছে। প্রতি রাতেই চলছে গণগ্রেফতার এবং বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। সন্ধ্যা নামার পর পরই বাণিজ্য নগরী ইয়াঙ্গুন, মিতকিনা এবং রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতউইতে সড়কে সাঁজোয়া যান চলছে। এদিকে কর্মীরা কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ইয়াঙ্গুনে রবিবার কয়েক শ রেলওয়ে কর্মী কাজে না গিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। পুলিশ তাদের আবাসিক কম্পাউন্ডে গিয়ে কাজে যেতে বলেছে। পরে অবশ্য ভিড় জমে গেলে পুলিশ সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকসহ আরও বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মীরা কাজে যওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বন্ধ থাকায় দেশজুড়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
একই সঙ্গে সামরিক জান্তা সমর্থিত পুলিশ গ্রেফতারকৃত অং সান সু চির রিমান্ডের মেয়াদও ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আরও বলা হয়েছে, বিক্ষোভ করার অভিযোগে যারা গ্রেফতার হবেন তাদের সাজা হবে ২০ বছর কারাদন্ড। খবরে আরও জানা গেছে, দেশটি জুড়ে লাখ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গতকাল টানা নবম দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন। ইয়াঙ্গুনে প্রকৌশলী এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারাও মিছিল করেছেন। রাজধানী নেপিদোতে মোটরসাইকেল বিক্ষোভ হয়েছে। ইয়াঙ্গুনসহ মিয়ানমারের শহরগুলোর রাস্তায় অবস্থান নিয়ে থাকা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাদের অগ্রাহ্য করে এসব কর্মসূচি চলছে। মিয়ানমারের টেলিকম অপারেটররা জানিয়েছেন, তাদেরকে স্থানীয় সময় রবিবার রাত ১টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নেটব্লক নামে একটি মনিটরিং গ্রুপ জানিয়েছে, নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর ইন্টারনেট তথ্য ব্যবহারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ১৪% ছিল। গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের দূতাবাস থেকে আমেরিকানদের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে’ বলা হয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা সামরিক বাহিনীর প্রতি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ তুলেছেন। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু বলেন, জেনারেলদের মধ্যে ‘মরিয়া হয়ে ওঠার চিহ্ন’ দেখা যাচ্ছে। অবিলম্বে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সই করা এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বর্জন করতে আমরা সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বৈধ সরকারকে অপসারণেরও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’