যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ (সমঝোতা স্মারক) চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যেটির কাঠামোগত খসড়া এরই মধ্যে হয়ে গেছে। এই সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন হলে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সব খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রাধিকার পাবে। অবশ্য একই ধরনের সুবিধা পাবে বাংলাদেশও।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিপক্ষীয় এই বাণিজ্য ব্যবস্থাপনাটির বিষয়ে সুবিধাভোগীদের নিয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরই খসড়াটি চূড়ান্ত করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হবে।
চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া টিফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব খাতে বিনিয়োগ সহায়তার কথা উল্লেখ করেছে। খসড়ার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, টিফা কাঠামোর মাধ্যমের তৈরি পোশাক, কৃষি, কৃষি বাণিজ্য, মৎস্য, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ম্যানুফ্যাকচারিং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষা সেবা ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সব ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। জানতে চাইলে, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফরউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত টিফা চুক্তির বিষয়ে ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। দুই দেশের মধ্যে টিফা নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এ ধরনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে দেশের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ সব সুবিধাভোগীর মতামত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এর আগে ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে টিফা চুক্তির প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তাতে সম্মত হয়নি। পরে কিছু বিষয় পরিবর্তন করে টিফার বদলে টিকফা চুক্তির প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর ওই বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এখন দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া টিফার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রস্তাবিত এই চুক্তিটির নাম হচ্ছে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জম্যান্ট’ (টিফা)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেটি হয়েছে সেটি মূলত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হচ্ছে সমঝোতা স্মারক। চুক্তি মানার বাধ্যবাধ্যকতা আছে। সমঝোতা স্মারক মানার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত এই কাঠামোটি নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত হবে মূলত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর নীতি অনুযায়ী। এ ছাড়া খসড়ায় এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
কী আছে খসড়ায় : বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা টিফার খসড়ার শুরুতে যে মৌলিক নীতির কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : (১) উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা এবং স্ব স্ব দেশের প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি করা; (২) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা; (৩) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দ্রুততর করার জন্য স্বচ্ছ ও মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; (৪) উভয় দেশ একে অপরকে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করবে যা প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে; এবং (৫) উভয় দেশই বেসরকারি খাতের যোগাযোগকে উৎসাহিত করবে। খসড়ার ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অংশীদ্বয় সেবা এবং পণ্য উভয় খাতেই বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। একে অপরের কোম্পানি বা সংস্থার বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে একে অপরের সংস্থা বা কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার সুবিধা প্রদান করবে। ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে।